ক্রীড়া প্রতিবেদক: শ্রীলঙ্কা সফরে দেশ ছাড়ার আগে গতকাল সকালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। তাদের সবার মধ্যেই দেখা গেলো খুশির আমেজ। লঙ্কানদের বিপক্ষে মাঠে নামতে যেন তারা উদগ্রীব হয়ে আছেন। আসলে এ সফরেই বাংলাদেশ খেলে ফেলবে নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচ। যেটি হবে সিরিজে দ্বিতীয় টেস্ট। আর এ ম্যাচটি কীভাবে স্মরণীয় করে রাখা যায়, সে পরিকল্পনা এখন থেকেই করছেন টাইগাররা, যা একটু হয়তো ভাবছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কেননা দ্বীপ রাষ্ট্রে এ ডানহাতি অফস্পিনারের দিকে খুব করেই চেয়ে থাকবে লাল-সবুজরা। তিনিও হতাশ করলেন না। সংবাদমাধ্যমে এ ব্যাপারটি নিয়ে বললেন, শততম টেস্টে সুযোগ পেলে ভালো কিছু করার চেষ্টা থাকবে আমার।
আগামী ১৭ মার্চ কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ওই টেস্টই নিজেদের শততম ম্যাচ টাইগারদের। নিজের সেরাটা দিয়ে এ ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছেন টাইগার অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। বললেন, ‘চেষ্টা করবো ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে। শততম ম্যাচটি খেলার সৌভাগ্য হলে ভালো খেলতে চেষ্টা করবো। ওরা অনেক অভিজ্ঞ দল। রঙ্গনা হেরাথসহ আরও বেশ কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ওদের দলে আছে। ওদের মাটিতে খেলা, তাই সব দিক থেকেই ওরা এগিয়ে থাকবে। তারপরও আমরা আমাদের যে যার জায়গা থেকে সেরাটা দিতে পারলে ভালো কিছু সম্ভব।’
শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। স্পিন উইকেটই হবে সেখানে। সেটা ভালো করেই জানা মিরাজের। তাছাড়া দ্বীপ রাষ্ট্রের কন্ডিশনে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে এ অফস্পিনারের। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার মাটিতে এর আগে খেলেছি। ওখানে স্পিন খুব ভালো ধরে। আশা করি ভালো কিছু করতে পারবো।’
গেলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে অভিষেক টেস্ট সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন মিরাজ। এরপর তাকে নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় শুরু হয় হৈচৈ। যদিও নিউজিল্যান্ড ও ভারত সফরের অতটা ভালো করতে পারেনি তিনি। তারপরও শ্রীলঙ্কা সফরের আলাদা দৃষ্টি থাকবে তার ওপরই। কেননা যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে খুলনার এ ক্রিকেটারের। তবে মিরাজ শুধু বোলিংয়ে নন, এবার ব্যাট হাতেও দলের জন্য ভালো কিছু দিতে চান। যেমনটা গতকাল বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে মিরপুরে বলছিলেন তিনি, ‘আমি সেরাটা দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। দলের প্রয়োজন মেটাতে চেষ্টার কোনো ঘাটতি থাকবে না। শেষ দুটি সিরিজ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমি চাই শ্রীলঙ্কা সফর স্মরণীয় করে রাখতে। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই অবদান রাখতে।’
দেশের মাটিতে সব সময় সেরা দল শ্রীলঙ্কা। যদিও দলটিতে এখন নেই বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তাই তো লঙ্কানদের বিপক্ষে এবারই ম্যাচ জয়ের সেরা সুযোগ দেখছে বাংলাদেশ। যেমনটা গত পরশু সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তবে মিরাজ বলেছেন, আমাদের দলে বর্তমান সময়ে সিনিয়ররা দারুণ খেলছেন। তাদের সঙ্গে জুনিয়ররাও ভালো খেলছে। এটা যদি শ্রীলঙ্কাতে আমরা ধরে রাখতে পারি ভালো কিছু হবে আশা করি।
গতকাল বেলা ২টায় দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। তামিম ইকবাল পাকিস্তান সুপার লিগে থাকায় দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা যেতে পারেননি। দুবাই থেকে ঠিক সময়ে দ্বীপ রাষ্ট্রে যাবেন এ হার্ডহিটার। তবে সোমবার রাতে পিএসএল থেকে দেশে ফিরে মঙ্গলবার মুশফিকদের সঙ্গেই লঙ্কাতে গেছেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আগামী ২-৩ মার্চ একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ৭ মার্চ গলে হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট। ১৭ মার্চ কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। ২২ মার্চ কলেম্বোতে একটি ওয়ানডে প্রস্তুতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ মার্চ ডাম্বুলাতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামবে দুদল। ২৮ মার্চ একই ভেনু্যুতে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। ১ এপ্রিল কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। এরপর ৪ ও ৬ এপ্রিল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আগামী ৭ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা মুশফিক-তামিমদের।
বাংলাদেশ টেস্ট দল
মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল হক, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, শুভাশীষ রায়, রুবেল হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বি ও মোস্তাফিজুর রহমান।