ক্রীড়া প্রতিবেদক: সবারই চোখে-মুখে ছিল দৃপ্ত প্রত্যয়! একটাই স্বপ্ন শততম টেস্টে যে করেই হোক জিততে হবে। গতকাল সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল সেই স্বপ্ন ছোঁয়া। অনেক চড়াই-উতরাই, আশা নিরাশার দোলাচল, পাওয়া না পাওয়ার হতাশা, সব কিছু যেন বাংলাদেশকে ভুলিয়ে দিলো মেহেদি হাসান মিরাজের একটি সুইপ শট। তাতেই চা বিরতির পর এসে গেল টাইগারদের শততম টেস্ট জয়ের অপেক্ষমাণ মাহেন্দ্রক্ষণ। মাঠ ও মাঠের বাইরের বিতর্ক গতকাল কলম্বোর পি সারা ওভালে ছুড়ে দিয়ে মুশফিকুর রহিমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় তুলে নিলো। একই সঙ্গে সিরিজে পেছনে পড়েও ১-১ ড্রয়ের স্বাদ নিলো হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
শততম টেস্টে বাংলাদেশের আগে জয়ের রেকর্ড ছিল পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
এবার চতুর্থ দল হিসেবে তাতে নাম লেখালো টাইগাররা। শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার আগে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলেছিলেন, শততম টেস্টে আমরা জিততে চাই। সে জন্য সবার রয়েছে কিছু পরিকল্পনা। গতকাল কলম্বোর পি সারা ওভালে সেটাই দেখা গেল। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১৯১ রানের লক্ষ্য ছুঁতে একমাত্র ইমরুল কায়েস ছাড়া টপ অর্ডারের অন্য ব্যাটসম্যানরা দারুণ খেলেছেন। সৌম্য সরকার-তামিম ইকবাল ২২ রানের জুটি গড়েন। এরপরই রঙ্গনা হেরাথের এক ওভারে পরপর দুই বলে সাজঘরে ফিরে যান সৌম্য-ইমরুল। কিন্তু ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টাতে দেননি তামিম ইকবাল। চতুর্থ উইকেটে সাব্বির রহমানকে নিয়ে গড়ে তোলেন ১০৯ রানের অসাধারণ জুটি। তাতে জয়ের ভিতটা বেশ মজবুত করে ফেলে সফরকারীরা।
লাঞ্চের পর তামিম-সাব্বির খেলছিলেন দারুণ। তখনই এ বাঁহাতির সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জেগে উঠেছিল। কিন্তু দিলরুয়ান পেরেরাকে তুলে মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে গেল ওপরে। দিনেশ চান্দিমালের দুর্দান্ত ক্যাচটিকে কিন্তু বাহবা দিতেই হয়। ১২৫ বলে ৮২ রান করে ফিরেছেন তিনি। চা বিরতির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৫৬। জয়ের জন্য তখন ৩৫ রান দরকার বাংলাদেশের। এ সময়টাতে এমন অবিবেচকের মতো তামিমের আউট মেনে নিতে পারেননি কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যে কারণে তিনি বেশ রেগে যান। যা টিভির পর্দায় ভালোভাবেই দেখেছেন টাইগার সমর্থকরা।
দলের প্রয়োজনে সাব্বিরও খেলেছেন দুর্দান্ত। কিন্তু নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি। ৭৬ বলে ৪১ রান করে দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাজঘরে। পেরেরার বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন। ব্যাটে না লেগে বল লাগে তার প্যাডে। আবেদন হয়েছিল। সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে সফল পেরেরা। জয়ের জন্য শেষ সেশনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩৫ রান। ম্যাচ তখন সফরকারীদের হাতের মুঠোয়। সে সময় ব্যাটিংয়ে সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম। সবাই ভেবে নিয়েছিলেন, এই দুই সেরা ব্যাটসম্যানই হয়তো শেষ করে আসবেন ম্যাচ। কিন্তু পেরেরাকে শরীরের খুব কাছ থেকে কাট করতে গিয়ে সাকিব বোল্ড হলে আবার চাপটা ফিরে আসে বাংলাদেশের ওপর। রিভিউ নিয়ে একবার বেঁচে যান টাইগার টেস্ট অধিনায়ক। শেষ দিকে কিছুটা এলোমেলো ছিল টাইগারদের ইনিংস। মোসাদ্দেক হোসেন ৭ রানের জীবন পান। তাকে নিয়েই দলের প্রয়োজনীয় রান তুলতে চেষ্টা করেন মুশি। শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হলেও জেতার ২ রান আগেই হেরাথের বলে কাট করতে গেলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। এরপর বাকিটা সারেন মিরাজ। হেরাথের অফ স্টাম্পের ফুল টাস বলে লেগ স্কোয়ারে সুইপ করেন মিরাজ। সেখানে ফিল্ডার মিস করায় অনায়াসে দুই রান নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তিনিও। তখন পুরো বাংলাদেশ দলও ঢুকে পড়েছে মাঠে। দেখে মনে হয়েছে, এ যেন এক টুকটো মিরপুর হোম অব ক্রিকেট! দেশের মাটিতে টানা ছয় টেস্ট জেতা শ্রীলঙ্কাকে অবশেষে নিজেদের শততম টেস্টে মাটিতে নামালো বাংলাদেশ।
টেস্টে জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে এবার নিয়ে তিনবার জিতলো বাংলাদেশ। এর আগে রান তাড়া করে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে গ্রেনাডায় ২১৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল ৪ উইকেটে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে মিরপুর টেস্টে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১০১ রানের লক্ষ্যটা অবশ্য তাড়া করতে নেমে ঘাম ছুটে গিয়েছিল বাংলাদেশের, জিতেছিল ৩ উইকেটে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮
বাংলাদেশ: ১ম ইনিংস: ৪৬৭
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৩১৯
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৭.৫ ওভারে ১৯১/৬ (তামিম ৮২, সৌম্য ১০, ইমরুল ০, সাব্বির ৪১, সাকিব ১৫, মুশফিক ২২*, মোসাদ্দেক ১৩, মিরাজ ২*; পেরেরা ৩/৫৯, হেরাথ ৩/৭৫, ডি সিলভা ০/৭, সান্দাকান ০/৩৪, লাকমল ০/৭, গুনারতেœ ০/৪)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ১-১ ব্যবধানে ড্র
ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল
সিরিজ সেরা: সাকিব আল হাসান
Add Comment