রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের যে কোনো একটি রাত হলো শবেকদর। এ রাতের ফজিলত অন্য যে কোনো রাতের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। বলা যেতে পারে, এ রাত হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে যত বেশি নফল নামাজ আদায় করবেন, তত বেশি সওয়াব। শবেকদরের রাতে যত বেশি পারেন নামাজ পড়ুন, আল কোরআন তিলাওয়াত করুন, জিকির ও দোয়া করুন। যেন আল্লাহতায়ালা আপনার আগের গুনাহ মাফ করে দেন এবং রহমত ও বরকত দান করেন।
এ রাতে দুই রাকাত করে সালাম ফিরিয়ে ন্যূনতম আট রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। সুরা ফাতেহার সঙ্গে আপনার জানা যে কোনো সুরা মিলিয়ে পড়লেই চলবে। তবে কিছু ব্যতিক্রম নিয়মে সুরা ফাতেহার সঙ্গে ৩৩ বার সুরা আল কদর, ৩৩ বার ইখলাস পড়লেও হয়।
‘সুবাহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ এ দোয়া পাঠ করলে অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে।
শবেকদরের নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাতায় সালাতিল লাইলাতিল কাদরি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চার রাকাত নামাজ কদরের রাতে আদায় করবে এবং উক্ত নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর ২১ বার করে সুরা ইখলাছ পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তিকে সদ্য ভ‚মিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দেবেন এবং বেহেশতের মধ্যে এক মনোমুগ্ধকর মহল তৈরি করে দেবেন।’
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রজনীতে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং উহার প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা কদর ও সুরা ইখলাছ তিনবার করে পাঠ করবে, নামাজ শেষে সিজদায় গিয়ে নি¤েœর দোয়াটি কিছু সময় পাঠ করে আল্লাহর দরবারে যা-ই প্রার্থনা করবে তিনি তাই কবুল করবেন এবং তার প্রতি অসংখ্য রহমত বর্ষিত করবেন।’
দোয়াটি হলো : ‘সুবাহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনÑতুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (ইবনে মাজা, সহিহ-আলবানি)
ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবেকদর প্রাপ্তি; রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবেকদর প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। ইতিকাফের মূল কথা হলো, সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যাওয়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি শরিফ, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৫, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা ২৯-৩০, হাদিস: ৩৪)
এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা আমরা অবশ্যই করব। কারণ এ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ। আর রাতের এ অংশে দোয়া কবুল হয়। নফল নামাজের সংখ্যার হিসাবের চেয়ে নামাজের গুণগত দিকটির দিকে আমাদের বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে।
শবেকদরের আমল হলো: নফল নামাজ, তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। খ) নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। গ) কোরআন শরিফ, সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, ইয়াসিন, সুরা ত-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা; ঘ. দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; ঙ) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; চ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা; ছ) কবর জিয়ারত করা; জ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।
মুহাম্মদ আকিল নবী