নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ শাহবাগ এলাকায়, আর শব্দদূষণে শীর্ষে রয়েছে গুলশান-২। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ এলাকা, তেজগাঁও, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ ও গুলশান-২-এর বায়ু ও শব্দ মানের তথ্য-উপাত্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ক্যাপস।
ইউএআইডি’র অর্থায়নে ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ‚গোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে এই গবেষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের বায়ুমান সূচক অনুযায়ী ‘অস্বাস্থ্যকর’। এসব স্থানে বস্তুকণা ২.৫ পিএম গড় বার্ষিক উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে ৭৭ মাইক্রোগ্রাম, যা আদর্শ মানের (১৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে ৫.১ গুণ বেশি।’ তিনি বলেন, ‘এছাড়া, বস্তুকণা পিএম ১০-এর গড় বার্ষিক উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে ১০৫ মাইক্রোগ্রাম, যা বার্ষিক আদর্শ মানের (৫০ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে গড়ে ২.১ গুণ বেশি।’
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০টি স্থানের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ শাহবাগ এলাকায়। সেখানে পিএম ২.৫-এর গড় উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৮৫ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। অর্থাৎ আদর্শ মান থেকে ৫.৬ গুণ বেশি এবং সর্বনি¤œ বায়ুদূষণ আছে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়Ñপিএম ২.৫-এর গড় উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৭০ গ্রাম। সেটাও আবার আদর্শ মান থেকে ৪.৬ গুণ বেশি।
শব্দদূষণের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার ১০টি এলাকার মধ্যে গুলশান-২ এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মান এলইকিউ ৯৫.৪৪ ডেসিবল, যা মিশ্র এলাকার জন্য দিনের বেলার জাতীয় আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবল) থেকে ১.৭ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। এরপর আছে আবদুল্লাহপুর। সেখানে গড় মান ৯৫.৪৩ ডেসিবল যা জাতীয় আদর্শ মানের (৬০ ডেসিবল) চেয়ে ১.৬ গুণ বেশি।
তেজগাঁও এলাকার সর্বনি¤œ এলইকিউ মান ছিল ৮৯ ডেসিবল, যা জাতীয় আদর্শ মান (৭৫) থেকে ১.১ গুণ বেশি। গবেষণাধীন আওতার মধ্যে সর্বাধিক ১৩২ ডেসিবল শব্দ রেকর্ড করা হয়েছে গুলশান-২ এলাকায়। সর্বনিন্ম শব্দ রেকর্ড হয়েছে সংসদ এলাকায় ৩১.৭ ডেসিবল।
১০ স্থানের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নীরব এলাকায় ৯৬.৭ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৫০ ডেসিবল) অতিক্রম করেছে। আবাসিক এলাকায় ৯১.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবল), মিশ্র এলাকায় ৮৩.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৬০ ডেসিবল), বাণিজ্যিক এলাকায় ৬১ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৭০ ডেসিবল) এবং শিল্প এলাকায় ১৮.২ শতাংশ আদর্শ মান (৭৫ ডেসিবল) অতিক্রম করেছে।
পুরো ঢাকার মিশ্র এলাকার সঙ্গে তুলনা করলে ১০ স্থানেই ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবলের ওপরে শব্দ পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে শব্দ ও বায়ুদূষণরোধে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র থেকে কিছু দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো বায়ুদূষণ রোধে ঢাকার সব নির্মাণ প্রকল্পে নির্মাণবিধি মানতে হবে। নিয়মিত তদারকিও নিশ্চিত করতে হবে।
বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। খসড়া নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ সুস্পষ্ট করে চ‚ড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ‚গোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নূরুল ইসলাম প্রমুখ।