রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ শাহবাগ এলাকায়, আর শব্দদূষণে শীর্ষে রয়েছে গুলশান-২। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমন্ডি-৩২, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, তেজগাঁও, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ ও গুলশান-২-এর বায়ু ও শব্দ মানের তথ্য-উপাত্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান। এ এলাকায় বিশিষ্টজন বিশেষ করে ধনাঢ্যদের বাস। অথচ এলাকাটিতে সর্বাপেক্ষা বেশি শব্দদূষণে। কিন্তু এলাকায় শব্দ সৃষ্টিকারী কলকারখানা নেই। আবার বায়ুদূষণে শীর্ষে রয়েছে শাহবাগ, যেখানে রয়েছে দেশসেরা তথা বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস, এনডোক্রাইন অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডারস (বারডেম)। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন এখানে। রয়েছে অভিজাতদের সংঘ ঢাকা ক্লাব। কাছাকাছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অবস্থানগত কারণ ও বিশিষ্টজনদের আবাসের কারণে গুলশান-শাহবাগ হওয়ার কথা রাজধানীর সর্বাপেক্ষা নীরব, কোলাহলমুক্ত শব্দ ও বায়ুদূষণমুক্ত এলাকা। কিন্তু এলাকা দুটি বায়ু ও শব্দদূষণে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা শুচিবায়ুগ্রস্ত; ‘অস্বাস্থ্যকর এলাকায় কীভাবে মানুষ বাস করে, তা নিয়ে নাকও সিঁটকান। কিন্তু তারা নিজেরাই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকেন, তা তাদের অজানা। ক্যাপস গবেষণা না করলে আমরাও জানতাম না কতটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আছে নগরবাসী। মজার ব্যাপার হলো, সর্বনি¤œ বায়ুদূষণ আছে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়Ñপিএম ২.৫-এর গড় উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৭০ গ্রাম। সেটাও আদর্শ মান থেকে ৪.৬ গুণ বেশি।
শব্দদূষণের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার ১০টি এলাকার মধ্যে গুলশান-২ এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মান এলইকিউ ৯৫.৪৪ ডেসিবল, যা মিশ্র এলাকার জন্য দিনের বেলার জাতীয় আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবল) থেকে ১.৭ গুণ বেশি পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে বায়ু ও শব্দদূষণ কোনোটিই থাকার কথা নয়। আইনপ্রণেতা, আইনপ্রয়োগকারী সবাই তো এ মহানগরেরই বাসিন্দা। মহানগরের সমস্যায় তো তারা এবং তাদের পরিবার-প্রজন্মও ক্ষতিগ্রস্ত। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শব্দদূষণ অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সালের মধ্যে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ কানে কম শুনবে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে বাংলাদেশে এলাকাভেদে গ্রহণযোগ্য শব্দের মাত্রার পাঁচটি স্তর আছে। সেই হিসেবে ঢাকা শহরে শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৪০ থেকে ৭০ ডেসিবল। অথচ এটি কোথাও কোথাও গ্রহণযোগ্য মাত্রার তিনগুণেরও বেশি। আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধানও রয়েছে। রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে ধুলাবালি। গবেষকরা বলেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূ² বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, বুদ্ধিমত্তা কমে। বায়ু ও শব্দদূষণ রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে আইন প্রয়োগে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, প্রায় সব বড় শহরে দূষণের চিত্র একই। পরিবেশদূষণকারী ইটভাটা, কলকারখানা, অধিক পুরোনো যানবাহন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।