নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারের রাখাইনে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে শরণার্থী বিষয়ে আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন।
বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর অবকাশকালীন বেঞ্চে চলতি সপ্তাহেই আবেদনটির শুনানি হতে পারে জানা গেছে। আবেদনে বাংলাদেশ সরকার, আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়েছে। আইনজীবী তানজিম আবেদনের পর গণমাধ্যমকে বলেন, জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। এখন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টিও আসে।
তিনি আরও জানান, ১৯৫১ সালের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশনে সুরক্ষার বিষয়টি বলা আছে। আর ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে সে কনভেনশনের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ দুটির কোনোটিতেই সই করেনি। ফলে একটি আইনি কাঠামোর শূন্যতা রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থীবিষয়ক আইন থাকলেও বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো আইন না থাকায় রিট আবেদনটি করা হয়েছে বলে জানান আবেদনকারী আইনজীবী।
আবেদনে বলা হয়েছে, সরকার মানবিক দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা দেশে ঢুকেছে। তাছাড়া পাকিস্তানি বিহারীরাও শরণার্থী হিসেবে বসবাস করে আসছে। বিশাল এ শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা ও সুরক্ষার জন্য একটি আইনি কাঠামো থাকা খুবই জরুরি।
আইনজীবী তানজিম আরও বলেন, সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের পাশাপাশি সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের এ বিধানমতে শরণার্থীরা কীভাবে, কোন আইনে আশ্রয় নেবে, তা আইন দ্বারা নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে দেশে এ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশ সদস্যসহ বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে রাখাইন রাজ্যে ‘শান্তিশৃঙ্খলা’ অভিযানের নামে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুন দেওয়াসহ সাধারণ মানুষের ওপর নানা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর পর থেকে এ পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের নিধনের সীমান্তবর্তী এলাকায় মাইন পুঁতে রেখেছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। জানা যায়, রাখাইন রাজ্যে অর্থনৈতিক জোন করার উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের নিধন করেন সু চি। বিশ্বনেতাদের চাপে চলতি জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগও দেননি তথা কথিত গণতন্ত্রী নেত্রী অং সান সু চি।
Add Comment