প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর): কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর পাঁকলে কিছুটা হলুদ। বিলুপ্তপ্রায় এই শরিফা ফল চাষে বেশ সফলতা পেয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের ব্যাংকার বাহাউদ্দীন। তার বাগানে থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে শরিফা ফল। বাতাসে দোল খাচ্ছে শরিফা, সেই সঙ্গে দোল খাচ্ছে বাগানমালিকের স্বপ্ন। সুস্বাদু ও বেহেস্তি ফল হিসেবে পরিচিত শরিফা চাষে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। আট বিঘা জমিতে বাগান করে প্রতি বছর মোটা টাকা আয় করছেন তিনি। তার এই সফলতা এলাকার তরুণ- যুবকদের শরিফা বাগান করার অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের বাহাউদ্দীন। শখের বশে বছর পাঁচেক আগে মাত্র দুই
বিঘা জমিতে শরিফা ফলের বাগান করেন। স্থানীয়ভাবে বীজ সংগ্রহ করে তা রোপণ করেন তিনি। প্রথম
বছরে খরচ হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরের বছর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সে বছর শরিফা স্থানীয় ফল
বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে তিনি পান ৪০ হাজার টাকা। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বেশি লাভ হওয়ায়
আরও ছয় বিঘা জমিতে শরিফা বাগান করেন। এ বছর তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পেয়েছেন তিন লাখ টাকা।
বাহাউদ্দীন জানান, আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পাওয়া যেত সুস্বাদু ফল শরিফা। এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ফল। বিলুপ্তপ্রায় এ ফলের গাছ ধরে রাখা এবং বাণিজ্যিকভাবে এ
বাগান করার প্রয়াস নিয়েই তিনি বাগান করেছেন। স্বল্প খরচ আর অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় স্থানীয় চাষি ও তরুণরা শরিফা বাগানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। স্থানীয়রা পরামর্শ নিচ্ছেন বাগান করার জন্য।
গাংনীর রায়পুর গ্রামের আল আমিন জানান, তিনি এ শরিফা চাষে সফলতার গল্প শুনেই পরামর্শ নিচ্ছেন বাগান করার। এরই মধ্যে দুই বিঘা জমি প্রস্তুত করেছেন। বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। রফিকুল আলমের মতো অনেকেই বাহাউদ্দীনের কাছে এবং কৃষি অফিসে পরামর্শ নিচ্ছেন শরিফা বাগান করার জন্য। স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী আ. রহমান জানান, মেওয়া বা শরিফা ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে।
নিজের হাতে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজার ও ঢাকাতে পাঠানো হয়। অনলাইনেও এর বেচাকেনা হয়। বাগান থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, শরিফা একটি বিলুপ্তপ্রায় সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল। এ ফল আবাদে খরচ কম। রোগবালাই একেবারই নেই। অথচ লাভ অনেক বেশি। কৃষি অফিস সব সময় চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ফল আবাদের সম্প্রসারণ ঘটলে পুষ্টির চাহিদা অনেকখানি পূর্ণ হবে।