শরীরচর্চা ও সুস্থ জীবন

সুস্থ জীবন সবার কাম্য। সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্য প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা। এই সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমরা নানা ধরনের ব্যায়াম করে থাকি। ব্যায়াম একাকী কিংবা দলগতভাবে করা যায়। ব্যায়াম করার ফলে দেহ ও মনের উন্নতি সাধিত হয়। প্রতিদিন নিয়মিত ও পরিমিত ব্যায়াম করলে দেহকাঠামো সুদৃঢ় ও সবল হয়। তবে একটানা ব্যায়াম করলে শরীরের জীবকোষগুলো ক্ষয়পূরণ করার সময় পায় না। তখন আমরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এই ক্ষয়পূরণ ও কর্মোদ্যম পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন। ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত জীবকোষগুলো পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। শরীরের ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ দূর হয়। ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ রাখে।

শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রভাব
শারীরিক সুস্থতার প্রধান বাহন হলো ব্যায়াম। ব্যায়াম ছাড়া একজন মানুষ শারীরিক সুস্থতা আশা করতে পারে না। ব্যায়াম ও খেলাধুলা শুধু দেহের বৃদ্ধি ঘটায় না, মনেরও উন্নতি সাধন করে। কারণ মন ছাড়া দেহ এককভাবে চলতে পারে না। দেহ হচ্ছে মনের আধার। শরীরচর্চায় দেহের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উন্নতি হয়, কিন্তু মনের উন্নতি কীভাবে হয় তা জানা প্রয়োজন। মনস্তত্ত্ব একটি বিজ্ঞান। এর কাজ হচ্ছে মনকে নিয়ে। মন কাজ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে অর্থাৎ মস্তিষ্ক দ্বারা। মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দেহ অচল হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সাহায্যে কাজের সমন্বয় সাধিত হয়। ব্যায়াম এসব অঙ্গের সুষম উন্নতি সাধন করে।

ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের বিভিন্ন নিয়ম

সরঞ্জাম ছাড়া যেসব ব্যায়াম করা হয়, তাকে সরঞ্জামবিহীন ব্যায়াম বলে। একে জিমন্যাস্টিকের ভাষায় ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা খালি হাতের ব্যায়াম বলে। নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরঞ্জাম নিয়ে ব্যায়াম করা হয়।

স্পিড এক্সারসাইজ

শরীরের গতি বৃদ্ধির জন্য যে ব্যায়াম করা হয় তাকে স্পিড এক্সারসাইজ বলে।

অ্যাবডোমিনাল এক্সারসাইজ

অ্যাবডোমিনাল এক্সারসাইজ তলপেটের ব্যায়ামকে বোঝায়। তলপেটের মেদ কমানোর জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়াম করা হয়, তাকে অ্যাবডোবিনাল এক্সারসাইজ বলে। যেমন সিট আপ, হাঁটুভেঙে সিট আপ, দুই পা শূন্যে উঁচু করে রাখা প্রভৃতি।

হ্যান্ড স্ট্যান্ড ও হেড স্ট্যান্ড
এ দুটো ব্যায়াম ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের মতো। এতে কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। হ্যান্ড স্ট্যান্ড (হাতে ভর করে দাঁড়ানো) ও হেড স্ট্যান্ড (মাথার ওপড় ভর করে দাঁড়ানো)।

এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিকস

ম্যাট বা গদির ওপর মুক্ত হাতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যায়াম করাকে এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিকস কিংবা শিক্ষামূলক জিমন্যাস্টিকস বলে। বয়স ও লিঙ্গভেদে এ ব্যায়াম করা উচিত। ব্যায়াম শুরু করার আগে মাঠ ও সরঞ্জামগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে। একজন সাহায্যকারী রাখতে হবে অনুশীলন করার সময় যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে।

সরঞ্জামসহ ব্যায়াম

ক্লাইম্বিং রোম, রোমান রিং, ফ্রিজবি, বল পাসিং, বল নিয়ন্ত্রণ, সাইক্লিং প্রভৃতি।

বিশ্রাম, ঘুম ও বিনোদন

শরীর সুস্থ না থাকলে মন ভালো থাকে না। ফলে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণভাবে করা যায় না। কোনো কাজ সুস্ত ভাবে সম্পাদন ও স্বচ্ছন্দে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন সুস্থ থাকা। শুধু ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ রাখা যায় না। আমাদের দেহে খাদ্য ও পানির যেমন প্রয়োজন তেমনি বিশ্রাম ও ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের পর শরীর ও মনের বিশ্রাম এবং ঘুমের প্রয়োজন। বিশ্রামের ফলে শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়। ঘুমের সময় দেহের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থিতিশীল হয়ে পূর্ণ বিশ্রামে থাকে। শ্বাসপ্রশ্বাস ও হজমশক্তির কাজ সুশৃঙ্গলভাবে চলতে থাকে। বিশ্রাম ও ঘুমের পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য বিনোদনও একটি মাধ্যম। চিত্তবিনোদনের জন্য খেলাধুলা, ভ্রমণ, সিনেমা ও নাটক দেখা, বনভোজন, বই পড়া ও গল্প করা যেতে পারে। সমাজে বসবাসরত মানুষের আগ্রহ ও চিন্তাধারা ভিন্ন হওয়ায় বিনোদনের ধারাও ভিন্ন হতে পারে।

শিপন আহমেদ

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০