বিশ্বব্রহ্মান্ডের কোনো কিছুই স্থবির নয়, সম্ভবত কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষকের পদটি ছাড়া, যার শুরু ও অবসর একই স্থানে। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়Ñএমনকি যুগের পর যুগ! অনিয়মের বেড়াজালে শরীরচর্চা শিক্ষকরা একই স্থানে স্থির। আমরা শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত। শরীরচর্চা শিক্ষক পদে নিয়োগ, শরীরচর্চা শিক্ষক পদে কর্মরত, আবার শরীরচর্চা শিক্ষক পদে থেকেই চাকরি থেকে অবসর, যা তাদের প্রতি চরম অবহেলা ও অবিচার। একই যোগত্যা নিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদানকারী শিক্ষকরা পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য পদে পদোন্নতির সুযোগ পান, কিন্তু শরীরচর্চা শিক্ষকদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত কলেজ পর্যায়ের শরীরচর্চা শিক্ষকরা ছিলেন তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যদায় এবং বেতন ভোগ করতেন দ্বিতীয় শ্রেণির। এখন মামলার মাধ্যমে হাইকোর্টের আদেশবলে কলেজ পর্যায়ের শরীরচর্চা শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা এবং দ্বিতীয় শ্রেণির বেতন স্কেল লাভ করেন। কলেজে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিধান থাকলেও শরীরচর্চা পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে পদোন্নতির কোনো বিধান নেই। কলেজে শরীরচর্চা শিক্ষক পদে কর্মরত শিক্ষকদের প্রায় ৯০ শতাংশ শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। অন্যান্য দপ্তরে তাদের চেয়ে কম যোগ্যতা নিয়ে এসএসসির পর কেবল তিন বছরের ডিপ্লোমা করে কলেজ শরীরচর্চা শিক্ষকদের চেয়েও অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা ও পদমর্যাদা ভোগ করেন। প্রতিটি জাতীয় অনুষ্ঠানে একজন শরীরচর্চা শিক্ষক অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া সাধারণ শিক্ষার পূর্ণতা আসে না। শারীরিক শিক্ষা নিজেকে রক্ষা করতে শেখায় এবং সঠিক সঙ্গী নির্বাচন করতে ও পরাজয়কে মেনে নিয়ে নতুনভাবে জয়ের জন্য প্রস্তুত হতে শেখায়। খেলাধুলার পরদর্শিতার মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশসহ পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর জ্ঞানদান করে।
কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষকদের দাবি, শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলাকে পূর্ণাঙ্গ বিষয় হিসেবে চালু করে এই বিষয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করুন। এতে শিক্ষকরা সম্মানিত হবে, জাতিও উপকৃত হবে। দেশের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিপিএড, সম্মান ও মাস্টার্স কোর্স চালু থাকলেও স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলার বিষয়টি এখনও অবহেলিত ও উপেক্ষিত।
কলেজ পর্যায়ে সব শিক্ষকের প্রারম্ভিক পদ ‘প্রভাষক’ হলেও শরীরচর্চা শিক্ষকরা এক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বেতন-ভাতা যা-ই হোক না কেন, শরীরচর্চা শিক্ষকরা মর্যাদার দিক থেকে এক ধাপ নিচে অবস্থান করছে। ফলে তারা মানসিক হীনম্মন্যতার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। তারা জীবনভর পদবঞ্চিত থেকেই অবসরে যান। তাদের প্রতি বৈষম্যের অবসানের জন্য প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সুধীর বরণ মাঝি
শিক্ষক
হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর