দেহে নানা জটিল রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রথমে ধরা দেয়; কিন্তু অনেকেই একে তেমন একটা প্রাধান্য দেন না। বরং এসব অবহেলা করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে কিন্তু বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায়। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। সুতরাং শরীরে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ওজন হ্রাস
হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া রোগের লক্ষণ হতে পারে। সাধারণ বিষয় মনে না করে গুরুত্ব দিন। নানা কারণে ওজন কমতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত হরমোন ক্ষরণ, ক্যানসার, পাকস্থলীর সমস্যা, ডায়াবেটিস, শরীরে পুষ্টির উপাদান শোষিত না হওয়া প্রভৃতি। তাই ওজন কমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দীর্ঘমেয়াদি জ্বর
শরীরের কোনো অংশে ইনফেকশন থাকলে জ্বর হতে পারে। এ জ্বর কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সারা দিন হালকা জ্বর ছিল; কিন্তু সন্ধ্যার পর বাড়তে থাকে এ রকম দীর্ঘদিন চললে মনে করা হয় যক্ষ্মা। মাসের বেশিদিনই জ্বর থাকলে এটি হতে পারে এইডসের লক্ষণ। প্রচণ্ড জ্বর হতে পারে ভাইরাস সংক্রমণে। জ্বর প্রথমে অল্প, ক্রমেই বেড়ে হতে পারে টাইফয়েড। কাঁপুনিসহ প্রচণ্ড জ্বর হতে পারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে। জ্বর যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
শ্বাসকষ্ট
সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার জন্য শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এছাড়া হৃৎপিণ্ড ও অন্যান্য কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসকষ্ট বেশি হলে, রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে, হাঁটাচলা করতে না পারলে, শ্বাসের সঙ্গে শব্দ হলে, হাঁসফাঁস লাগলে, শ্বাস টানার হার বেড়ে গেলে দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বা ভারী কোনো কাজে শ্বাসকষ্ট হলে ও বুকে চাপ অনুভব করলে মনে করা হয় এটি হৃৎপিণ্ডের রোগ।
মলত্যাগে পরিবর্তন
বারবার পাতলা পায়খানা হলে একে ডায়রিয়া বলে। সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। মলের পরিবর্তন দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়। মলের সঙ্গে রক্ত গেলে, মল আলকাতরার মতো কালো-দুর্গন্ধযুক্ত হলে, ডায়রিয়া এক সপ্তাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্য তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কোলন ক্যানসার, রেক্টাল ক্যানসার, এনালফিশার, হেমোরয়েড, ইনফ্লামেটরি বাওল রোগসহ অনেক কারণেই এ লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
প্রচণ্ড মাথা ব্যথা
হঠাৎ করে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা জটিল রোগের লক্ষণ হতে পারে। এ ব্যথা এতটাই তীব্র যে, সাধারণ মাথা ব্যথার সঙ্গে তুলনা করা যায় না। মাথা ব্যথার সঙ্গে জ্বর, আবোল-তাবোল কথা বলা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা না রাখা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। এ ধরনের ব্যথায় হতে পারে মাথায় রক্তক্ষরণ, মাথার খুলির রক্তনালিতে প্রদাহ, মস্তিষ্কে টিউমার। এ সময় অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অবশ হয়ে যাওয়া
স্বাভাবিক কাজকর্মের সময় হঠাৎ শরীরের কোনো এক পাশ অবশ হয়ে যাচ্ছে। কথা বলতে পারছেন না বা কথা জড়িয়ে যাচ্ছে কিংবা চোখে ঠিকমতো দেখতে পারছেন না অথবা ঝাপসা দেখছেন; কিন্তু কিছু সময় পর সব সমস্যা ভালো হয়ে গেল। আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। মনে করছেন, দুর্বলতার কারণে হচ্ছে। কোনো মারাত্মক সমস্যা নয়। আসলে তা নয়, এটি হলো মিনিস্ট্রোক।
হজমে সমস্যা
অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া। এর সঙ্গে ওজন কমে গেলে, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব প্রভৃতি সাধারণ লক্ষণ হলেও গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, আগে থেকে আলসারের সমস্যা থাকতে পারে। আলসার থেকে ক্যানসার হয়। তাই এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা করাতে হবে।
ক্রমাগত কাশি
একটানা দীর্ঘদিন কাশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। কারণ, ক্রমাগত কাশি হতে পারে ব্লাড ক্যানসার, লিম্ফোমা কিংবা লিউকোমিয়ারের লক্ষণ।
মেরুদণ্ডে ব্যথা
ঠাণ্ডার কারণেও অনেকের মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়। আবার টানা বসে থাকলে মেরুদণ্ড ব্যথা হয় বলে অনেকে এ ব্যথাকে সাধারণভাবে দেখেন। কিন্তু টানা অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। এটিও হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ।
দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া
অনেক সময় কাজের ব্যস্ততা কিংবা কাজের মধ্যে থাকলে অনেকে ক্লান্তি বোধ করেন। তাই মাঝেমধ্যেই ক্লান্ত থাকলেও কাজ করেন। কিন্তু অনেক সময় বিশ্রাম নেওয়ার পরও ক্লান্তি দূর হয় না। এক্ষেত্রে মনে হতে পারে পরিমিত বিশ্রাম হচ্ছে না। কিন্তু এ ভাবনা ভুল। এটি কোনো বড় রোগের লক্ষণ হতে পারে।
চামড়ার নিচে ফোলা ভাব
অনেক সময় শরীরের চামড়ার নিচে গুটি গুটি হয়ে ফুলে ওঠা বা দলা পাকানো গোটার মতো অনুভব হয়। ওই গুটিগুলো বুক বা বুকের আশেপাশে অথবা যৌনাঙ্গে দেখা দিলে ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। অবশ্য হাতে পায়ে এটি দেখা দিলে ভয়ের কিছু নেই।
শরীরের চামড়ায় পরিবর্তন
হঠাৎ করে চামড়ায় ছোট দানা হওয়া কিংবা শরীরের চামড়ার মাঝে রঙের পরিবর্তন, কোনো কারণ ছাড়াই জখমের মতো দাগ হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ ভালো নয়। তাই এসব দাগ হলে একবারেই অবহেলা করা যাবে না।
স্কিন র্যাশ
জ্বরের সঙ্গে স্কিন র্যাশ উঠলে অনেকেই এটাতে গুরুত্ব দেন না। ভাবেন, জ্বর ভালো হয়ে গেলে র্যাশও ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এ র্যাশের লক্ষণ ডেঙ্গুর জন্যও হতে পারে।
তাই দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।