Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:34 pm

শরীরে লবণ কমে গেলে কী হয়

শরীরের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবণ। আমাদের রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতি খনিজ লবণ নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রেখে চলে। এসব লবণের মধ্যে সোডিয়াম আমাদের স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য সবচেয়ে জরুরি। কোনো কারণে সোডিয়াম কমে যাওয়া একটি জরুরি মেডিকেল পরিস্থিতি। তাই সোডিয়াম কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে অতিসত্বর নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়া আবশ্যক। আর সোডিয়াম যাতে না কমে, তেমন ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত। কারও বারবার সোডিয়াম কমার ঘটনা ঘটলে কারণ অনুসন্ধান করাও জরুরি।

কেন কমে সোডিয়াম

বমি, পাতলা পায়খানা কিংবা অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে সোডিয়াম। তাছাড়া যেহেতু আমরা খাবারের মাধ্যমেই লবণ গ্রহণ করি, তাই অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণের কারণেও কমে যেতে পারে সোডিয়ামের মাত্রা। আবার দীর্ঘমেয়াদি নানা সমস্যার কারণে; যেমন কিডনি, লিভার বা হƒৎপিণ্ডের সমস্যা, ডায়াবেটিস প্রভৃতি কারণে সোডিয়াম কমে যেতে পারে। কিডনি যেহেতু লবণ পানির ভারসাম্য বজায় রাখে, তাই কিডনি রোগীদের এটি একটি পরিচিত সমস্যা।

বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে সোডিয়াম কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে মাত্র ১ থেকে ২ বার বমি বা পাতলা-পায়খানার কারণেই শরীরের লবণের মাত্রার তারতম্য হয়ে যায়। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও এমনটা হতে পারে, বিশেষ করে যেসব ওষুধ প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, যেমন ডাইউরেটিকস। হরমোনজনিত কিছু সমস্যা যেমন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা লবণ বারবার কমে যাওয়ার জন্য দায়ী।

কীভাবে বুঝবেন: সোডিয়াম কমে গেলে প্রধানতম যে লক্ষণ বোঝা যায়, তা হলো জ্ঞানের মাত্রার তারতম্য হওয়া। অসংলগ্ন আচরণ, আপনজনদের চিনতে না পারা, এলোমেলো কথা বা উত্তেজনা প্রভৃতি। বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ করেন বা কথা কমে যায়, নির্জীব হয়ে পড়েন বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম মিথস্ক্রিয়া করেন, তবে সতর্ক হন। কারও কারও খিঁচুনিও হতে পারে। কেউ অচেতন হয়ে পড়তে পারেন।

কী করবেন: সোডিয়াম কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে রোগীকে। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ওরস্যালাইন খাইয়ে নিতে পারেন। বিশেষত যাদের শরীর থেকে সোডিয়াম বেরিয়ে যাওয়ার মতো কোনো কারণ লক্ষণীয় (যেমন বমি, পাতলা পায়খানা কিংবা অতিরিক্ত ঘাম হয়েছে) অথবা এর আগে সোডিয়াম কমে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ স্যালাইন বা লবণপানি খাইয়ে দেয়া উচিত।

ডা. মো. মতলেবুর রহমান

সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ