শেয়ার বিজ ডেস্ক: দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের শর্ত কমানোর আহ্বান জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের অধিকতর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা আশা করি, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও আমাদের খুব বেশি শর্ত না দিয়ে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। যাতে যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি, সেটাকে আরও ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারি।’
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) দুদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর: বাসস।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে কাজগুলো শুরু করেছি, সেগুলোকে টেকসই করতে চাই। আর সেটা করতে গেলে আর্থিক সংগতি দরকার। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমাদের যারা উন্নয়ন সহযোগী আছেন তারাও এগিয়ে আসবেন। সহযোগিতা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘একটা বিষয়ে কেউ যখন সফল হয় সেখানে সাহায্য করতে তো কারও দ্বিধা থাকে না, বরং আগ্রহ আরও বাড়ে। সেটা আমরা দেখি, কাজেই সেটাই হবে বলে আমরা মনে করি।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সরকারের উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে যাতে উন্নয়ন সহযোগীরা সম্পৃক্ত হতে পারে, সে জন্যই দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। যেখানে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া’র পাশাপাশি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলো তুলে ধরা হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠকের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ সেফার, জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা, এডিবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট শিক্সিন চেন এবং ইউএন রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর ও লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের কো-চেয়ার মিয়া সেপো বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি), জাইকা, ইউএসএইড, ইউকে এইড, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ২০১০ সাল থেকে বিডিএফ’র সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার চতুর্থ বারের মতো এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ’৭৫-এর পর আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে, কখনও গণতন্ত্র ধারাবাহিকভাবে চলতে পারেনি, সামরিক স্বৈরশাসন বলবৎ ছিল। ফলে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সাধিত হয়নি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা মাথায় রাখতে হবে কোনো রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া কখনও কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। আর সেটা আজকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একেবারে প্রমাণিত সত্য।’
তিনি বলেন, একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য সেখানে যেমন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন, কমিটমেন্ট থাকা দরকারÑতেমনি একটি পরিকল্পনা থাকা দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের যদি একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকে যে, দেশটাকে কীভাবে তারা গড়তে চায়Ñতাহলেই সে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে। আর আমরা সে কাজটাই করেছিলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র নিয়ে আলোচনা করায় আলোচকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। ভবিষ্যতের দিকে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছি, তাতে একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না, কেউ না খেয়ে কষ্ট পাবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, নিরক্ষর থাকবে না, প্রতিটি মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।’
‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয় কিন্তু সবচেয়ে নির্মম শিকার’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এই অবস্থার জন্য দায়ী তাদেরই সব থেকে বেশি অবদান রাখা দরকার।’ তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য আমরা ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন করে সেটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আশা করি, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ইতোমধ্যে আমরা সেটা মোকাবিলা করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছি।’ এক্ষেত্রে আমি বলব, ‘আমরা যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করি, তখন অনেক প্রতিশ্রুতি (উন্নত দেশের) পাই। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর সেভাবে কেউ পূরণ করে না।’
তিনি বলেন, কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। নিজেদের টাকা দিয়েই এই ফান্ড গড়েছি, তাতে সামান্য কিছু সহযোগিতা আমরা পেয়ে থাকি। সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি মনে করি, উন্নত দেশগুলোর এবং আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের আরও এগিয়ে আসা দরকার। আরও সহযোগিতা দরকার। সেসব দেশ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাদের সবারই এই সহযোগিতাটা দরকার।’