শেয়ার বিজ ডেস্ক: শস্যবাহী আরও দুটি জাহাজ ইউক্রেন ছেড়েছে। দেশটির চোরনোমরস্ক বন্দর থেকে জাহাজ দুটি যাত্রা করেছে। গতকাল শনিবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার শস্য রপ্তানি-সংক্রান্ত চুক্তির মধ্যস্থতাকারী তুরস্কের তরফ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে ইউক্রেন ছেড়ে আসা শস্যবাহী প্রথম জাহাজ রাজোনির অবস্থান ও গন্তব্য জানে না ইউক্রেন কিংবা লেবানন। খবর: রয়টার্স।
ইউক্রেনের শস্য রপ্তানিতে দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটাতে গত ২২ জুলাই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এক চুক্তি স্বাক্ষর করে মস্কো ও কিয়েভ। ওই চুক্তির আওতায় এরই মধ্যে ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগর উপকূলের বন্দর ছেড়েছে মোট ২৭টি জাহাজ।
আঙ্কারা জানায়, খাদ্যশস্য নিয়ে নতুন করে ইউক্রেন ত্যাগ করা জাহাজ দুটি হচ্ছে জুমরুত আনা ও এমভি ওশান এস। এগুলোয় যথাক্রমে ছয় হাজার ৩০০ টন সূর্যমুখী তেল এবং ২৫ হাজার টন গম রয়েছে। জাহাজ দুটি যাবে ফ্রান্স, সুদান, তুরস্ক ও নেদারল্যান্ডসে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার শস্যবাহী আরও একটি জাহাজ ইউক্রেনের এ চরনোমোরস্ক বন্দর ছেড়ে যায়। সেদিনও বিষয়টি নিশ্চিত করে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ভুট্টাবোঝাই বেলিজ-পতাকাধারী আই মারিয়া নামের জাহাজটিসহ আরও চারটি জাহাজের ইউক্রেন ছাড়ার কথা জানায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এ কারণে বিপুল পরিমাণ শস্য ইউক্রেনে আটকে পড়েছে। এসব শস্যের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টন। ইউক্রেনের বন্দর অবরোধ করে এ বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি রাশিয়া আটকে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের প্রায় অর্ধেক খাদ্যশস্য রপ্তানি বর্তমানে আটকে রয়েছে। আজভ ও কৃষ্ণ সাগরের মধ্য দিয়ে রপ্তানির প্রধান রুটটি অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের উদ্যোগে দেশটি থেকে শস্যবোঝাই জাহাজ অন্য দেশের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে ২২ জুলাইয়ের ঐতিহাসিক চুক্তির পর ইউক্রেনের ওদেসা বন্দর দিয়ে গত ১ আগস্ট শস্য নিয়ে বের হয় সিয়েরা লিয়নের পতাকাবাহী পণ্যবাহী জাহাজ রাজোনি। তবে গত সপ্তাহে লেবাননে অবস্থিত ইউক্রেনের দূতাবাস জানায়, বর্তমানে তারা জানেন না জাহাজটি কোথায় রয়েছে। ২৬ হাজার মেট্রিক টন শস্যবাহী এ জাহাজটির গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননের বৈরুত বন্দর। ওদেসা থেকে বৈরুতে যাওয়ার পর শস্যগুলোর ক্রেতা সেগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, কারণ তাদের কাছে অনেক দেরিতে পণ্য এসেছে। এরপর সেটি বৈরুত ছেড়ে যায়। শোনা যায়, সিরিয়ায় ভিড়বে এ জাহাজ। জাহাজের খোঁজ না জানার বিষয়ে এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের লেবানন দূতাবাস জানায়, আমরা এখন জানি না জাহাজটির অবস্থান কোথায় এবং এর গন্তব্য কোথায়। আমাদের কাছে তথ্য আছে জাহাজটির পণ্য এরই মধ্যে কয়েকবার বিক্রি করা হয়েছে।
ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি জানায়, ইউক্রেন থেকে সবচেয়ে বেশি গম রপ্তানি হয় মিসরে। এরপর রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, তুরস্ক, ইয়েমেন, ফিলিপাইন, তিউনিশিয়া, লিবিয়া ও ইথিওপিয়া। এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টন খাদ্যশস্য রপ্তানি করেছে ইউক্রেন।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। ইউক্রেনের লভিভ শহরে তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। তিন নেতার সাক্ষাতে ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র ও গম রপ্তানির বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। গুতেরেসের এক মুখপাত্র বলেন, জেলেনস্কি, এরদোয়ান ও জাতিসংঘ-প্রধান শস্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন। একই সঙ্গে যুদ্ধ ও সংঘাত থামাতে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের বিষয়েও আলোচনা করবেন তারা।