Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 10:25 am

শহরাঞ্চলে মাতৃমৃত্যু হ্রাসের ভুতুড়ে পরিসংখ্যান!

নিজস্ব প্রতিবেদক: নানা ধরনের উদ্যোগের ফলে প্রতিবছরই হ্রাস পাচ্ছে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত। এটি ইতিবাচক। কিন্তু ২০২৩ সালে শহরাঞ্চলে মাতৃমৃত্যু হ্রাসের বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যে উপাত্ত প্রকাশ করেছে, তা কোনোভাবেই বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সর্বশেষ হালনাগাদ উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশের শহরাঞ্চলে প্রতি লাখ জীবিত জšে§র বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ৫৬ জন। অথচ এর আগের বছর এটি ছিল ১৩৫ জন। বিগত পাঁচ বছরে শহরাঞ্চলে প্রতি লাখ জীবিত জšে§র বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর হার ১২০ জনের নিচে আসার নজির নেই। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে কেন এত কমে গেল, তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বিবিএস।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হালনাগাদ ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিসটিকস, ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস মিলনায়তনে গতকাল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ছিল এক দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল এক দশমিক ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে।

২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রতি লাখ জীবিত শিশু জšে§র বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৬৫ জন। ওই বছর শহরাঞ্চলে এ হার ছিল ১২৩ জন এবং গ্রামে ছিল ১৯১ জন। এর পরের বছর শহরে ছিল ১৩৮ জন এবং গ্রামে ছিল ১৭৮ জন। ২০২১ সালে এ হার ছিল প্রতি লাখে ১৬৮ জন। এর মধ্যে গ্রামে ১৭৬ জন এবং শহরে ১৪০ জন। ২০২২ সালে শহরে প্রতি লাখ জীবিত জšে§র বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর হার দাঁড়ায় ১৩৫ জন এবং গ্রামে ১৫৭ জন। জাতীয়ভাবে এ হার ছিল ১৫৩ জন। আর ২০২৩ সালে শহরে মাতৃমৃত্যুর হার নেমে এসেছে মাত্র ৫৬ জনে। অন্যদিকে গ্রামে এ হার ১৫৭ জনেই স্থিত রয়েছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে কোন উদ্যোগের ফলে এভাবে শহরে মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পেল, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বিবিএস। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্ন করা হলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।

এদিকে বিগত ২০২৩ সালে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়েনি। ২০২৩ সালে শিশু জšে§র সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর বা ৭২ বছর সাড়ে তিন মাস, যেটি ২০২২ সালের জরিপে ছিল ৭২ দশমিক ৪ বছর। এছাড়া ঢাকা শহরে বর্তমানে যারা বস্তিতে বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বরিশালের মানুষ রয়েছে। আর ১৫ থেকে ২৮ বছর বয়সী তরুণ জনগোষ্ঠীর ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ কোনো ধরনের কর্ম, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত নেই।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসভিআরএস ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন। বক্তব্য রাখেন বিবিএসের ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মাসুদ আলম এবং প্রশ্ন-উত্তর পর্ব পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ববস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপংকর রায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এক হাজার ১৭১ জন। এছাড়া প্রতি হাজার জনসংখ্যার স্থূল জš§হার ১৯ দশমিক ৪ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯ দশমিক ৮ জন। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের হার ২০২২ সালের (৪১ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬ দশমিক ১, যা ২০২২ সালে ছিল ৫ দশমিক ৮।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ২৪ দশমিক ২ বছর এবং নারীদের ১৮ দশমিক ৪ বছর। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পল্লিতে আগমনের হার ২০ দশমিক ৪ এবং শহরে আগমনের হার ৪৩ দশমিক ৪। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিগমন প্রতি হাজারে ৬ দশমিক ৬১ জন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে

হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ জন। আন্তর্জাতিক আগমন বা বহিরাগমন প্রতি হাজারে ২ দশমিক ৯৭ থেকে কমে হয়েছে ২ দশমিক ৩৭ জন।

এছাড়া শিক্ষা, কর্মে বা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণদের সংখ্যা ২০২২ সালের (৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ) তুলনায় কমে ২০২৩ সালে ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়েছে। পাঁচ প্লাস বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে ১৫ প্লাস বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৩ দশমিক ৮) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫ প্লাস বছর বয়সীদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৫০ দশমিক এক শতাংশ।