কাজী সালমা সুলতানা: ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাতের মধ্যে তা সম্পন্ন করেন। পরদিন ‘শহিদ বীরের স্মৃতিতে’ এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় শহিদ মিনারের খবর ছাপা হয়। মিনারটি মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) ১২ নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে তৈরি হয়। এই শহিদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন), নকশা করেন বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দার। শহিদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে এ শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে শহিদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। উদ্বোধনের দিনই পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রথম শহিদ মিনার ভেঙে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহিদ মিনার তৈরি করলে এটিও তৎকালীন সরকারের অঘোষিত নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়। প্রথম নির্মিত শহিদ মিনারটি ভেঙে ফেললে সারাদেশে, বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনগুলোয় অনুরূপ ছোট ছোট অসংখ্য শহিদ মিনার গড়ে ওঠে। ১৯৫৩ সাল থেকে দেশের ছাত্র-যুবসমাজ একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করতে থাকে। সে বছর ছাত্রদের প্রথম প্রভাতফেরি শুরু হয়। পরের বছরও ছাত্ররা একইভাবে শহিদ দিবস পালন করেন।
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়ার পর ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর নকশা করেন ভাস্কর হামিদুর রহমান। কিন্তু ১৯৫৮তে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারির পর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আযম খানের আমলে এর নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি এর নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধান করে। মূল নকশা ছেঁটে-কেটে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করা হয়। মূল নকশার ফোয়ারা ও নভেরা আহমেদের ম্যুরালসহ ইত্যাদি অংশ বাদ দেওয়া হয়। এভাবেই শহিদ মিনারের নির্মাণকাজ ১৯৬৩ সালে শেষ হয়। ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহিদ ব্যক্তিত্ব আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পাকবাহিনী শহিদ মিনারটি আবার ভেঙে দেয় এবং সেখানে ‘মসজিদ’ কথাটি লিখে রাখে। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে শহীদ মিনার নতুন করে তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এবার ১৯৬৩ সালের সংক্ষিপ্ত নকশার ভিত্তিতে দ্রুত শহিদ মিনারের কাজ শেষ করা হয়। ১৯৭৬ সালে শহিদ মিনারের নতুন নকশা অনুমোদিত হলেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমান শহিদ মিনারটিকে অর্ধসম্পন্ন শহিদ মিনার বলা চলে।