শেয়ার বিজ ডেস্ক: গ্রাহকদের শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি বা ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল) পেতে চার থেকে সাত মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ইভি ব্যবসায় প্রবেশ করেছে চীনা স্মার্টফোন জায়ান্ট শাওমি। ইতোমধ্যে দেশটিতে অবস্থিত শো-রুমগুলোয় তাদের প্রথম মডেল এসইউ৭ প্রদর্শন করা হয়েছে। খবর: দ্য ইকোনমিক টাইমস।
শাওমি ক্রয়াদেশ নেয়া শুরুর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৮৮ হাজার ৮৯৮টি অর্ডার পেয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে গাড়িগুলো সরবরাহে কোম্পানিটির ২৭ সপ্তাহ বা ৬ মাসের বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানায় কোম্পানিটি।
একটি স্ট্যান্ডার্ড এসইউ৭ মডেলের শাওমি গাড়ির দাম ২৯ হাজার ৮৭০ ডলার। এই মডেলের সর্বোচ্চ দামের গাড়ির দাম ২ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ ইউয়ান। এই গাড়ির জন্য ক্রেতাদের ১৮ থেকে ২১ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে টেসলার মডেল ৩-এর গাড়ির দাম চীনে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯০০ ইউয়ান।
এসইউ৭ প্রো মডেলের জন্য ১৮ থেকে ২১ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। তবে সবচেয়ে দামি মডেলটির দাম ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ ইউয়ান, যা পেতে ২৭ থেকে ৩০ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছে শাওমি।
উল্লেখ্য, পোরশের টায়কান ও প্যানারামা স্পোর্টস কারের সঙ্গে তুলনা করে শাওমির এসইউ৭ মডেলের ডিজাইন করা হয়েছে। এই মডেলের বিক্রি বাড়াতে বিশেষ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, যার আওতায় ফাউন্ডারস এডিশন নামে এর বিশেষ সংস্করণ আনা হয়েছে। ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া ক্রেতাদের জন্য নানা ধরনের দামি উপহার দিচ্ছে কোম্পানিটি। তাদের আশা, এসইউ৭-এর সঙ্গে ফোনে সংযুক্ত অপারেটিং সিস্টেম, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইস ক্রেতাদের কাছে মডেলটির চাহিদা বৃদ্ধি করবে।
গত রোববার প্রযুক্তি জায়ান্টটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লেই জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইবোতে বলেন, শিগগির ফাউন্ডার এডিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্রয়াদেশ নেয়া হবে।
শাওমির এসইউ৭ মডেলের গাড়িটির মিনিমাম রেঞ্জ ৭০০ কিলোমিটার, যেখানে টেসলার মডেল ৩-এর রেঞ্জ ৫৬৭ কিলোমিটার।
স্মার্টফোন বিক্রিতে বিশ্বব্যাপী শাওমির অবস্থান তৃতীয়। বৈশ্বিক বাজারের ১২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার তাদের দখলে। বর্তমানে টেসলা ও বিআইডির মতো বৈদ্যুতিক গাড়ির বৃহত্তম কোম্পানিকে টক্কর দিতে তারা এই ব্যবসায় নেমেছে।
বর্তমানে চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবসা বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ। দেশটিতে অন্তত দুইশ কোম্পানি এ ধরনের গাড়ি উৎপাদন করছে। ক্রেতাদের কাছে এর মধ্যে অন্তত ৪০টি কোম্পানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গত দশকে চীন সরকার অনেক কোম্পানিকে ভর্তুকিও দিয়েছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবসায় নামে শাওমি।
বেইজিংয়ে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত বেইক গ্রুপের কারখানায় শাওমির ইভি নির্মাণ করা হচ্ছে। বছরে এ কারখানায় ২ লাখের বেশি গাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে অত্যধিক দামের কারণে বিশ্ববাজারে ইভির বিক্রি কমে আসায় গাড়ির উৎপাদনও কমছে। একই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলও ইভি নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে।
চীনা সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটিতে ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবসায় গড় মুনাফা ৫ শতাংশ কমে এসেছে। খাতটির সবচেয়ে বড় কোম্পানি বিআইডি গত সপ্তাহে জানায়, তাদের ত্রৈমাসিক মুনাফা বৃদ্ধি গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর ছিল। কারণ, কোম্পানিটির বিক্রয় কমেছে।
২০২১ সালে শাওমি স্মার্ট বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণে আরও বেশি মনোযোগ দেয়। তারই অংশ হিসেবে কোম্পানিটি পরবর্তী দশকে এই খাতে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে চীনের আরেক স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি হুয়াওয়েও ইভি নির্মাণের পথে হাঁটছে। গত সোমবার হুয়াওয়ের তৈরি আইটো ইভির পক্ষ থেকে ২০ হাজার ইউয়ান মূল্যছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফ্লাগশিপ মডেল এসইউভি জি৯ কেনায় এই ছাড় দিচ্ছে।