Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 7:34 pm

শান্তিতে নোবেল পেলেন দুই সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক: এ বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন দুই সাংবাদিক। তারা হলেন মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলোয় চলতি বছরের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পূর্বশর্ত হিসেবে যা অপরিহার্য, সেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০২১ সালের নোবেল পুরস্কার উঠছে এই দুজনের হাতে।

মারিয়া রেসা ফিলিপাইনের নাগরিক, অন্যদিকে দিমিত্রি মুরাতভ একজন রুশ। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাহসিকতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজ দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তারা।

একই সঙ্গে মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ তাদের সেসব পূর্বসূরির প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যারা সংবাদমাধ্যমের জন্য বৈরী পরিবেশে সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে গণতন্ত্র, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।

ফিলিপাইনে ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন ?মারিয়া রেসা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে। দেশটিতে এই ধারার সাংবাদিকতাকে অগ্রগামী করতে ২০১২ সালে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম কোম্পানি ‘র‌্যাপলার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা বর্তমানে সেটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে আছেন।

পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠানে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, মারিয়া রেসা বরাবর নির্ভীকভাবে ফিলিপাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার ও তার প্রতিষ্ঠান র‌্যাপলারের এ বিষয়ে ভূমিকার স্ফুরণ লক্ষ করা যায় দেশটির বিতর্কিত মাদকবিরোধী অভিযানের সময়।

২০১৬ সালে ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট দুতার্তে মাদকবিরোধী অভিযানের ঘোষণা দেন। অভিযানে বিপুল পরিমাণ হত্যাকাণ্ড চলার ফলে সেটি একসময় সরকার ও জনগণের মধ্যকার লড়াইয়ে রূপ নেয়ার উপক্রম হয়।

অভিযানের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমাতে ওই সময় ফিলিপাইনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় যেসব ভুয়া সংবাদ ও তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল, সে বিষয়ে অনুন্ধানে বিশেষ অবদান রাখেন মারিয়া রেসা ও তার নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান র‌্যাপলার।

অন্যদিকে রাশিয়ার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় ক্রমবর্ধমান বৈরী পরিস্থিতিতে গত চার দশক ধরে লড়াই করে যাচ্ছেন সাংবাদিক দিমিত্রি আদ্রাইভিচ মুরাতভ। রাশান দৈনিক নাভায়া গেজেতার অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি।

১৯৯৩ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে নাভায়া গেজেতা। তার দুই বছর পর ১৯৯৫ সাল থেকে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুরাতভ।

রাশিয়ার সবচেয়ে নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম হিসেবে এরই মধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে নাভায়া গেজেতা। শুরু থেকেই রাশিয়ার ক্ষমতাসীন পক্ষকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে আসছে পত্রিকাটি।

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও পেশাগত সততার কারণে সমাজ-রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে রাশিয়ার জনগণের অন্যতম ভরসাস্থল বর্তমানে এই নাভায়া গেজেতা।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাশিয়ার দুর্নীতি, পুলিশের দমন-পীড়ন, অবৈধ গ্রেপ্তার ও আটক, নির্বাচনে কারচুপি, শিল্পকারখানায় অব্যবস্থাপনা, রুশ সেনাবাহিনীর দেশের অভ্যন্তর ও বাইরের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি প্রভৃতি বিষয়ে সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশ করে আসছে নাভায়া গেজেতা।

সততার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য অবশ্য বিস্তর খেসারতও দিতে হয়েছে পত্রিকাটিকে। বিভিন্ন সময় রাশিয়ার ক্ষমতাসীন পক্ষের হয়রানি, হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে এই দৈনিককে।

এমনকি সংবাদ প্রকাশ করার জন্য হত্যার শিকারও হয়েছেন নাভায়া গেজেতার কয়েকজন সাংবাদিক। ১৯৯৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পত্রিকাটির ছয় সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নারী সাংবাদিক আনা পুলিৎজা স্ক্রুপস্কায়া, যিনি চেচনিয়ায় রুশ সরকারের সামরিক অভিযান নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন।

তবে এত কিছুর পরও মূলনীতি থেকে বিচ্যুতি ঘটেনি নাভায়া গেজেতার এবং তার প্রধান কৃতিত্ব পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভের। রাশিয়ায় নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ধারাকে বর্তমানে যারা এগিয়ে নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় আছেন মুরাতভ।

শান্তিতে নোবেলজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির। সব নোবেল পুরস্কারের বিষয় সুইডেনের স্টকহোম থেকে ঘোষণা দেয়া হলেও শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হয় নরওয়ের অসলো থেকে। কাজটি আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাপত্র অনুযায়ীই করা হয়।

গত বছর শান্তিতে নোবেল পায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ক্ষুধা নিরসনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দেয়া হয়ে। ২০১৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলী। শান্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য তাকে এ পুরস্কার দেয়া হয়।