শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়ার আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছের প্রধান একটি বিমানঘাঁটি দখলে নিয়েছে রুশ সৈন্যরা। প্রায় ২০০ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে ওই ঘাঁটি দখল নেয়া হয়েছে বলে গতকাল শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ অভিযানে ইউক্রেনের দুই শতাধিক সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। খবর: ইন্টারফ্যাক্স, রয়টার্স।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, কিয়েভের খুব কাছে হোসটোমেল বিমানঘাঁটি দখল করতে ২০০ হেলিকপ্টার এবং সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ডিভিশন ব্যবহার করা হয়েছে।
হোসটোমেল বিমানঘাঁটি দখলে নেয়ায় ভারী সামরিক সরঞ্জাম এবং সৈন্য পরিবহনকারী রাশিয়ার বিমান অবতরণ করতে পারবে। সেখানে বিমানঘাঁটিতে দীর্ঘ রানওয়ে থাকায় রাশিয়া থেকে সরাসরি কিয়েভের ওই বিমানবন্দরে সৈন্য পরিবহন করা যাবে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেনকোভ বলেছেন, রাশিয়ান বিমানবাহিনী হোসটোমেল দখলে নেওয়ার জন্য ২০০টি হেলিকপ্টার ব্যবহার এবং ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর ২০০ জনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে। তবে এ অভিযানে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কোনো হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও ইউক্রেন পাল্টা দাবি করে বলেছে, হোসটোমেল বিমানবন্দরে সংঘর্ষে ব্যাপক রুশ সৈন্য হতাহত হয়েছে।
এদিকে কিয়েভ শহরের মেয়র বলেন, ইউক্রেনের রাজধানী এখন প্রতিরক্ষামূলক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
ইউক্রেন শান্তি চায়, আলোচনায় প্রস্তুত: এদিকে রুশ হামলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল সকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রুশ হামলায় তার দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কার্যত একা ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তির জন্য আলোচনায় আহ্বান জানায়।
এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেন, ইউক্রেন শান্তি চায় এবং ন্যাটোর ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানসহ অন্যান্য বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। খুদে বার্তায় রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘যদি তারা ন্যাটোর ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে মস্কোতে বসে আলোচনা করতে চায়, সম্ভব হলে সেটি হওয়া উচিত। আমরা এতে ভয় পাই না। আমরা এটা নিয়েও কথা বলতে পারি।’
তিনি বলেন, শান্তির জন্য সংলাপে বসতে আমরা প্রস্তুত। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অথবা ন্যাটো জোটের অংশ নয় ইউক্রেন। যদিও উভয় সংস্থায় যোগ দিতে চায় দেশটি। কিন্তু ইউক্রেনের ন্যাটো জোটে যোগদান কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি নয় মস্কো। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সময় ইউরোপের দেশগুলোর কাছ থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার আশ্বাসের পর নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করে ইউক্রেন।
২০১৪ সালে গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদকারীদের আন্দোলনের মুখে রাশিয়া-সমর্থিত ইউক্রেনের সরকারের পতন ঘটে। এরপর সামরিক অভিযান চালিয়ে কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখলে নেয় রাশিয়া। একই সঙ্গে দেশটির পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জানায় মস্কো।
এর সাত বছর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বৃহস্পতিবার আকাশ, স্থল এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে রুশ সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন। ইউক্রেনের বেশিরভাগ শহরে টানা হামলা, গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর শুক্রবার রাজধানী কিয়েভে পৌঁছেছে রুশ সৈন্যরা।
অস্ত্র সমর্পণ করলেই কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা: এদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করলেই কেবল কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় মস্কো প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। একই সঙ্গে তিনি বলেন, নব্য-নাৎসিরা ইউক্রেন শাসন করুক, মস্কো তা চায় না। শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রুশ সৈন্যদের প্রবেশের পর এসব কথা বলেছেন তিনি।
লাভরভ আরও দাবি করেছেন, রাশিয়া চায় ইউক্রেনের জনগণ স্বাধীন হোক এবং স্বাধীনভাবে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ থাকুক। তবে প্রতিবেশী এ দেশটি নব্য-নাৎসিদের শাসনে চলুক সেটি ক্রেমলিন কখনই চায় না, বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে গণতান্ত্রিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছে না মস্কো।
অন্যদিকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠের ডাইমার এবং ইভানকিভ শহরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। সেখানে রাশিয়ার বেশ কিছু সাঁজোয়া যানকে অগ্রসর হতে দেখা গেছে। গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, ইউক্রেনে পাল্টা প্রতিরোধে রাশিয়ার অন্তত ৪৫০ সৈন্য নিহত হয়েছে।