গোপালগঞ্জ সদরসহ কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানী ও মুকসেদপুর উপজেলা বিল অধ্যুষিত। বর্ষাকালে এসব স্থানের নানা খাল-বিল ও জলাশয় পানিতে তলিয়ে যায়। এ পানিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় শাপলা। ওই শাপলা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এখানকার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ।
বর্ষা মৌসুমে কৃষকের কাজ না থাকায় তাদের অনেকে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েন। বেকার যুবকরাও তাদের সঙ্গে শামিল হন। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শাপলা একদিকে যেমন সবজির চাহিদা মেটাচ্ছে, তেমনি মানুষের আয়ের পথও তৈরি করে দিচ্ছে।
শাপলা সাধারণত বর্ষায় ডুবে যাওয়া বোরো ও আমন ধানক্ষেতসহ পাটক্ষেতে বেশি জš§ায়। নানা অঞ্চলের মানুষের কাছে সবজি হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এটি। শাপলা বিক্রিকে কেন্দ্র করে কাশিয়ানী উপজেলার রাহুথড়ে পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। ভোরের আলো ফুটতেই এ বাজারের আশেপাশের গ্রামসহ প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শাপলা সংগ্রহকারীরা জড়ো হন।
ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে এ বাজার। ফুলের সাদা আভায় আচ্ছাদিত হয়ে যায় পুরো বাজার। পাইকাররা এসব শাপলা কিনে জেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইলে বিক্রি করে থাকেন।
শাপলার পাইকারি আড়তের ইজারাদার শঙ্কর কুমার বসু বলেন, প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ পাইকারি বিক্রির জন্য এখানে শাপলা আনে। পাইকাররা তা কিনে ভ্যান, ইজিবাইক ও নছিমনে করে আশেপাশের জেলায় বিক্রি করেন। প্রতিদিন প্রায় ৪০ গাড়ি শাপলা এখান থেকে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
শাপলা সংগ্রহকারী হীরা বিশ্বাস বলেন, আমি প্রায় ১১ বছর ধরে বর্ষাকালে শাপলা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। প্রতিদিন প্রায় ৯০০ টাকার শাপলা সংগ্রহ করি। ভোরে বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করে দিই।
গোপালগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রের উপপরিচালক ডা. অমৃত লাল বিশ্বাস বলেন, প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলায় রয়েছে এক দশমিক তিন গ্রাম খনিজ পদার্থ, এক দশমিক এক গ্রাম আঁশ, তিন দশমিক এক গ্রাম ক্যালোরি, ৩১ দশমিক সাত গ্রাম শর্করা ও ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। শাপলার ফল দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু খই। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শাপলা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও ইতিবাচক সাড়া পড়েছে।
দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ