শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শনিবার এসব কর্মসূচি থেকে একই সঙ্গে শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
বরিশাল নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখা। গতকাল দুপুরে এ সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি একাত্ম হন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাসদের বরিশাল জেলা শাখার সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী।
সভাপতির বক্তব্যে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘মাছ-মাংস-চালের স্বাধীনতা চাওয়া যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমরা সবাই এই অপরাধে অপরাধী। ১৬ কোটি মানুষকে আপনারা গ্রেপ্তার করুন।’
কর্মসূচি থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তি ও সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে জেসমিন আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) দিনাজপুর শাখা ও জেলা সচেতন সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বাসদের দিনাজপুর শাখার আহ্বায়ক কিবরিয়া হোসাইন। মানববন্ধনে বাসদ নেতা কিবরিয়া হোসাইন বলেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতার মসনদে থেকে সরকার অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে। একটা ভীতির সংস্কৃতি কায়েম করেছে। তাদের পক্ষে কথা বললে দেশপ্রেমী আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে দেশদ্রোহের খাতায় নাম তুলে দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় এনে হয়রানি করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার এখনই সময়।
নীলফামারী শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নীলফামারী বন্ধুসভার সভাপতি নিপুন রায়। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বক্তারা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।
পটুয়াখালীতে মানববন্ধন করেছে পটুয়াখালী প্রেস ক্লাব ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। গতকাল দুপুরে প্রেস ক্লাব চত্বরে এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ একাত্ম প্রকাশ করেন। কর্মসূচি থেকে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়।
পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হƒদয়ের সঞ্চালনায় ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে বক্তব্য দেনÑবাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) জেলা সভাপতি মোতালেব মোল্লা, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শ. ম. দেলোয়ার হোসেন, কবি সুভাষ চন্দ, সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, জালাল আহমেদ প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে স্বপন ব্যানার্জী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বারবার মামলা করে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দ্রুত এ কালো আইন বাতিল এবং গ্রেপ্তার সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
টাঙ্গাইলে মানববন্ধন করেছেন সখীপুর প্রেস ক্লাবের সদস্যরা। গতকাল দুপুরে সখীপুর প্রেস ক্লাবের সামনের উপজেলা পরিষদ সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বারবার মামলা করে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক ও সুধী সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বিভিন্ন পেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, রাতের আঁধারে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেয়া হলো। এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। এর ব্যবহার ও ধারা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। এ কালো আইন প্রণয়ন করে মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বারবার মামলা করে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ আইন প্রয়োগ করা হলো। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে অবিলম্বে সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার, সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে ও বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।