Print Date & Time : 1 July 2025 Tuesday 4:53 am

শার্শায় ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ধুম

মহসিন আলী, বেনাপোল: বর্ষা মৌসুম শেষে শুরু হয়েছে ইট তৈরির মৌসুম। এরই মধ্যে অনেক ইটভাটায় প্রয়োজনীয় মাটি ফুরাতে শুরু করেছে। ফলে যশোরের শার্শা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। নির্বিচারে আবাদি জমি থেকে মাটি কাটার ধুম পড়লেও যেন দেখার কেউ নেই। এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। জমির উপরের অংশ (টপ সয়েল) ইটভাটায় চলে যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে। বর্ষাকালে উম্মুক্ত ধানি জমিগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলেও সেখানে

রোপা-আমন ও উঁচু জমিতে ইরি-বোরো ধান হয় বছরজুড়ে। নিম্নাঞ্চলের জলরাশিতে পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির নানা রকমের সুস্বাদু মাছ। এ জনপদের মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাছের লোভে নানা প্রজাতির পাখি এসে বিচরণ করত।

কিন্তু ইটভাটার মালিকদের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার আগ্রাসী মনোভাবের কারণে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

শার্শা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নদী-নালা,

খাল-বিল অনাবাদি জমি বাদে ২৭ হাজার ৬১১ হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ধরনের ফসল চাষ করেন কৃষকরা। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় স্থানীয় একশ্রেণির কৃষক ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারে খরচ ছাড়াই প্রতি গাড়ি মাটি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

এভাবে মাটি কাটার ফলে তিন ফুট গর্ত করে প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০ হাজার টাকার মাটি বিক্রি করছেন কৃষকরা। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এভাবে নির্বিচারে আবাদি কৃষিজমি থেকে মাটি খনন করায় দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। অন্যদিকে উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন হ্রাস পাওয়াসহ সৃষ্ট হচ্ছে ছোট-বড় স্থায়ী জলবদ্ধতা।

জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ বুরুজ বাগান, সরুপদহ, গাতিপাড়া, সম্মন্ধকাঠি, শ্যামলাগাছী, নিজামপুর, কাগজপুকুর, মাটিপুকুর, লাউতাড়া, শার্শা, উলাশী, বাগআঁচড়া, গোগা, কায়বাসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি থেকে অবাধে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। মাটি কাটার প্রভাবে আগামী ইরি-বোরো মৌসুমে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষ কম হবে বলে ধারণা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

তবে ইটভাটার মালিকরা দাবি করছেন, নদী ও পরিত্যক্ত স্থানের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নদীর মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি থাকায় ইট ভালো হয় না। এ মাটির সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ফসলি জমির মাটি মিশিয়ে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।

শার্শা উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমল কৃষ্ণ জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ফলে জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবাণু থাকে তা অনুজীবের কার্যাবলি সীমিত হয়ে যায়। জৈবশক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে। উর্বরশক্তি কমে যাওয়ার ফলে এ জমিতে আর আশানুরূপ ফলন হবে না। ফসল কম হওয়ার কারণে চাষিদের আগ্রহ কমে যাবে। এজন্য দ্রুত এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে না পারলে উৎপাদনে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পুলক কুমার মণ্ডল বলেন, ‘ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র নেওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’