Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 1:35 am

শালবন বৌদ্ধবিহার

প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করে, সহনশীল করে তোলে। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় ঐতিহাসিক নিদর্শন তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তেমনই একটা দর্শনীয় স্থান কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধবিহার। জেনে নিন, ঐতিহাসিক এ বিহারের আদ্যোপান্ত-

 

বিহারের অবস্থান

কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান। কোটবাড়িতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় বিহারটির অবস্থান। এর আশেপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এর নামকরণ হয়েছে শালবন বিহার। এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। আজও ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।

 

বর্ণনা

শালবন বিহার আকারে চৌকো। এর বাহুগুলো ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। সব কক্ষের মাঝে রয়েছে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল। বিহারে রয়েছে ১৫৫টি কক্ষ। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে দেয়াল। এ কক্ষগুলোয় বৌদ্ধভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মচর্চা করতেন তারা। এ ছাড়া বিহারে রয়েছে একটি হলঘর। হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়।

জনশ্রুতি রয়েছে, খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব বৌদ্ধবিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দির, নবম ও দশম শতাব্দীতে চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ে নির্মাণকাজ ও সংস্কার সম্পন্ন হয়।

এখানে প্রতœতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে নানা ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি অন্যতম। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে বিবেচিত।

 

যেভাবে যাবেন

রাজধানী থেকে কুমিল্লা যাওয়ার অনেক পরিবহনের বাস আছে। সায়েদাবাদ কিংবা যাত্রাবাড়ী থেকে ছেড়ে যায় বাসগুলো। শহরের সম্মুখে কোটবাড়িতে নেমে সিএনজিচালিত ট্যাক্সি কিংবা রিকশায় চড়ে সরাসরি শালবন বিহারে যেতে পারবেন।

 

বেনজির আবরার