শাসক গোষ্ঠী বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করেছে: খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘শাসক গোষ্ঠী বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরার পর গতকাল ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন নেওয়ার পর লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপাসন।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে যে অনুদান এসেছিল, তা এতিমখানার কল্যাণেই ব্যয় করা হয়েছে। সে ব্যয়ের পর বাকি অংশ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। প্রতিটি পয়সাই গচ্ছিত রয়েছে। ব্যাংকের সুদ যুক্ত হয়ে সে টাকা এখন অনেক বেড়েছে। একটি টাকাও তছরুপ বা অপচয় করা হয়নি।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারেক রহমানকে মুদ্রা পাচারের এক মামলার বানোয়াট অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন একটি আদালত। সে বিচারককে শাসক মহল হেনস্তা ও হয়রানির উদ্দেশ্যে এমন তৎপরতা শুরু করে যে, তিনি আত্মরক্ষার জন্য বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সে বিচারক নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এসব ঘটনা অহরহই ঘটছে।’

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে শাসক মহলের ‘বিরোধ’ সম্প্রতি প্রায় প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি প্রকাশ্যেই বলেছেন বিচার বিভাগের হাত-পা বাঁধা। তিনি আরও বলেছেন, ‘বিচারকগণ স্বাধীন নন’। এসব কারণে আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কি না, তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।’

আদালতের স্থান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বিচারকের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখানে বিচারের এ সিদ্ধান্ত আপনি নিজে নেননি। কোথায়  বসে আমার বিরুদ্ধে মামলার বিচারকাজ পরিচালিত হবে সেটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে শাসক মহলের অভিপ্রায় ও ইচ্ছা জড়িত। ক্ষমতাসীনদের  উদ্দেশ্য, এর মাধ্যমে বিচারের নামে আমাকে জনসম্মুখে হেয় করা, অপমান করা। এটাও বিচার প্রক্রিয়ায় এক ধরনের হস্তক্ষেপ। সরকারের এমন পদক্ষেপ জনমনে ‘এক ভীতিকর পরিবেশের’ জন্ম দিয়েছে এবং ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে ‘চরম সংশয় ও সন্দেহ’ সৃষ্টি করেছে। এর প্রতিকার চাইব কোথায়? বিচার প্রভাবিত করা এবং বিচারাধীন বিষয়ে বল্গাহীন মন্তব্য করা হচ্ছে।’

খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আবদুর রেজাক খান, এ জে মোহাম্মদ আলী ও সানাউল্লাহ মিয়া। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রমনা থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের কথা ছিল চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি। কিন্তু দফায় দফায় তার আইনজীবীদের সময়ের আবেদন ও বিচারকের প্রতি অনাস্থার আবেদনে তা পিছিয়ে যায়। এতিমখানা দুর্নীতি মামলার আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে এবং মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ কারাগারে আছেন। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান আছেন লন্ডনে। আর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকি বক্তব্য শেষ করার জন্য আগামী ২৬ অক্টোবর শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০