শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেতে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানের আপিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ডলার কেনাবেচা করার অভিযোগে ১০ বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ জরিমানা পুনর্বিবেচনা করে ট্রেজারিপ্রধানদের অব্যাহতি দিতে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করেছে। গত ৫ অক্টোবর প্রত্যেক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ বরাবর আবেদন করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজাবউল হক।

তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডে ব্যাংকগুলো আপিল করেছে। আগামী বোর্ডে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে কি না সিদ্ধান্ত হবে।

শাস্তি পাওয়া ১০টি ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের আপিল সংক্রান্ত চিঠি এসেছে শেয়ার বিজের হাতে। ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর একচেঞ্জ হাউজ থেকে নির্ধারিত দরের চেয়ে উচ্চহারে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়ের কারণে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ধারায় ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানা করা হয়। কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ধারায় ১০৯ (১২) অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ট্রেজারি প্রধানকে আর্থিক জরিমানা থেকে অব্যাহতি দেয়া পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন পেশ করা হয়।

এর আগে নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ডলার কেনাবেচা করার অভিযোগে ১০ বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী আপনাকে জরিমানা করা হলো। আগামী ১৪ দিনের মধ্যে তাদের অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। দশটি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এসব কর্মকর্তাকে শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েছিল। এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জানিয়ে প্রথম চিঠি পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, বেশি দামে ডলার বেচাকেনার দায় ট্রেজারিপ্রধানরা এড়াতে পারেন না। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর ‘ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয়নি’, সে কারণে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় ট্রেজারি বিভাগ টাকা ও ডলারের চাহিদা-জোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংকে ট্রেজারি বিভাগের প্রধান পদে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন।

একাধিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ ট্রেজারিপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে তাদের ব্যাংক আমদানিকারকদের কাছে বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে। তবে দুই একজন ট্রেজারিপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত দামে প্রবাসী আয় কিনেছে।

বেঁধে দেয়া দামের তুলনায় বেশি দামে ডলার কেনাবেচার অভিযোগে গত বছরের আগস্টে দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে গত বছরের শেষ প্রান্তিক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ডলারের দাম নির্ধারণ করছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক একটি গ্রুপ সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ে আমদানি ব্যয় উল্লেখ করে একগুচ্ছ নথিপত্র জমা দেয়। এসব নথি পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক দল অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোর শাখা ও প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০