যেকোনো দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) গুরুত্ব অপরিসীম। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেখানকার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছেন এসব দেশের বাইরের মানুষ। কাজেই দেশের বাইরের মানুষ যাতে আসতে আগ্রহী হন, সে জন্য তাদের গমনাগমের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে যে বিষয়টি আসে, তা হলো বিমানবন্দরের সেবা। একটি দেশে বিদেশি নাগরিকদের আগমন ও সেখানে অর্থ বিনিয়োগের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে মিনাবন্দরের সুযোগ-সুবিধার ওপর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে বৈকি। এক্ষেত্রে বিমানবন্দরক্রেন্দ্রিক নানা সুযোগ-সুবিধা জোরদার করা আবশ্যক বলে মনে করি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘ভোগান্তির শিকার শাহজালালের যাত্রীরা: ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সারাদেশে নেই সরাসরি গণপরিবহন ব্যবস্থা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সে বাদান শুরুর ৩৮ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও এ বিমানবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানেরও কার্যকর সংযোগ স্থাপিত হয়নি। ফলে এ বিমানবন্দর ব্যবহারকারী দেশি ও বিদেশি যাত্রীদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি বিদেশি কোনো নাগরিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তার নির্ধারিত হোটেল বা আবাসস্থলে যাওয়ার জন্য মানসম্পন্ন কোনো যানবাহন পান না। ফলে তাদের নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অথচ বিশ্বের প্রায় সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগমাধ্যমে সংযুক্ত।
আধুনিক বিশ্বের বিমানবন্দরগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে কোনো যাত্রী সেখানে অবতরণের পর যে কোনো যোগাযোগমাধ্যমে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারেন কোনো প্রকার ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই। বিমানবন্দরগুলোর সঙ্গে একদিকে থাকে কার্যকর চক্রাকার মেট্রোরেল সংযোগ, অন্যদিকে থাকে নানা ধরনের কমিউটার সেবা। এছাড়া কার্যকর ট্যাক্সিক্যাব সেবা নিশ্চিত থাকে এবং বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য এসব ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া নির্ধারিত থাকে। ফলে কোনো যাত্রীর কাছ থেকে ক্যাবচালকের বাড়তি অর্থ আদায় বা ভাড়া নিয়ে দরকষাকষির কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে পরিবহন ব্যবস্থায় এক ধরনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসবের কোনো বালাই নেই। এখানে লাগেজ নিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের হাজারো বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয় মনে করি।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী উত্তরণ পর্বে রয়েছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এছাড়া ২০৩১ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে হবে। আর সেটা করতে হলে অত্যাধুনিক বিমানবন্দর সেবা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি দেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।