শাহজালাল বিমানবন্দরে ৫৫ নয়, স্বর্ণ চুরি হয়েছে ৬১ কেজি

নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা শুল্ক বিভাগের লকার থেকে ৫৫ কেজি নয়, চুরি হয়েছে প্রায় ৬১ কেজি স্বর্ণ। অর্ধশত কোটি টাকার বেশি দামের এই স্বর্ণ চুরির সঙ্গে শুল্ক বিভাগের লোকজনই যুক্ত বলে বিভাগীয় তদন্তে এসেছে। এজন্য দু’জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন সিপাহিকে দায়ী করা হয়েছে।

তবে ছোট পদে থাকা তিনজন কর্মী বিমানবন্দরের মতো সুরক্ষিত এলাকার গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ সরিয়ে নিল, কেউ টের পেল না; এ নিয়ে অনেকটা বিস্ময় তৈরি হয়েছে বিমানবন্দর-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এর সঙ্গে ভেতরে-বাইরের আর কেউ যুক্ত রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে।

পরে সেগুলো ঢাকার বায়তুল মোকাররম, তাঁতীবাজার ও গাইবান্ধায় নির্দিষ্ট কিছু স্বর্ণের দোকানে ভাগে ভাগে বিক্রি করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি সূত্র জানায়, এর সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কারও কারও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে আঁচ করা যাচ্ছিল। এজন্য কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পরপর এ-সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলাটি ডিবি থেকে পিবিআইতে স্থানান্তরিত হয়। এরপর তদন্তের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।

ডিবির সূত্র জানায়, ডিবির তদন্তকালে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছে, বিভিন্ন দফায় এসব স্বর্ণ সরানো হয়েছে। পরে সেগুলো বায়তুল মোকাররম, তাঁতীবাজার ও গাইবান্ধায় নির্দিষ্ট কিছু স্বর্ণের দোকানে ভাগে ভাগে বিক্রি করা হয়েছে।

তবে এ-সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলার তদন্তকালে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কিছু ইঙ্গিত দিলেও, মামলাটি পিবিআইতে যাওয়ার পর সেটা চাপা পড়ে যায়। ডিবি তখন সন্দেহভাজন হিসেবে আটজনকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা বিভিন্ন পালায় শুল্ক বিভাগের ওই গুদামের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় শুল্ক বিভাগের দু’জন যুগ্ম কমিশনার ও একজন উপকমিশনারকেও ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এর কয়েক দিন পর মামলাটি ডিবি থেকে তদন্তের জন্য পিবিআইতে পাঠানো হয়।

বিমানবন্দরের গুদাম থেকে স্বর্ণ চুরির বিষয়টি জানাজানি হয় গত আগস্টের শেষ দিকে। তখন জানা গিয়েছিল চুরি হয়েছে ৫৫ কেজি স্বর্ণ। এ বিষয়ে ৩ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থানায় মামলা করে শুল্ক বিভাগ। একই সঙ্গে শুল্ক বিভাগ একজন অতিরিক্ত কমিশনারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গত ২ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

তবে তারা কীভাবে স্বর্ণ সরিয়েছেন, কত দিনে সরিয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে তাদের আর কেউ সহযোগিতা করেছে কি না; সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি তেমন কিছু বের করতে পারেনি।

শুল্ক বিভাগের (ঢাকা কাস্টম হাউস) কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ গত বুধবার বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। মামলায় যা উল্লেখ করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সেটা উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভাগীয় তদন্তের সময় কর্মকর্তারা জানতে পারেন, চুরি হওয়া স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ৬১ কেজি। এর সঙ্গে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম এবং সিপাহি নিয়ামত হাওলাদারকে। তারা ওই গুদামে বিভিন্ন পালায় দায়িত্ব পালন করতেন। তবে তারা কীভাবে স্বর্ণ সরিয়েছেন, কত দিনে সরিয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে তাদের আর কেউ সহযোগিতা করেছে কি না; সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি তেমন কিছু বের করতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুরি হওয়া স্বর্ণ ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গুদামে জমা হয়েছে। এত দিন গুদামে স্বর্ণ রাখার কথাও নয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি মাসে একবার করে নিরীক্ষা প্রতিবেদন এনবিআরকে জমা দেয়ার কথা এবং স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দেয়ার কথা। এক্ষেত্রে সেটা মানা হয়নি। এছাড়া যে তিনজনকে জড়িত হিসেবে তদন্ত কমিটি শনাক্ত করেছে, তাদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম দুই বছরের বেশি এবং সাইফুল ইসলাম দেড় বছরের মতো এই দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সাধারণত এই দায়িত্বে এক বছরের বেশি কাউকে রাখা হয় না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০