নিয়াজ মাহমুদ : শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি, আর্থিক প্রতিবেদনে গরমিল ও মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে একাধিকবার পদক্ষেপ নিয়েছে। গঠন করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির নেপথ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোলাম মোস্তাফা ও নাসিমা আক্তার লতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৯(ই)(৫) ধারা লঙ্ঘন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি পুঁজিবাজারবিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সুপারিশ করা হয়। ট্রাইব্যুনালে সরাসরি মামলা করার বিধান না থাকায় এ মামলা করছে না বিএসইসি। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মতামত চেয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শাহজিবাজার পাওয়ার একাধিক অনিয়ম করেছে। যা আমাদের তদন্তেও উঠে এসেছে। যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশন কাজ করছে।’
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০১৪ সালে তালিকাভুক্তির পর থেকেই আলোচনায় থাকা এ কোম্পানির বিরুদ্ধে গত বছরের ৩ আগস্ট শেয়ারদর কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে তদন্ত কমিটি করে বিএসইসি। এ জন্য উপ-পরিচালক ইউসুফ ভূঁইয়া ও সহকারী পরিচালক রাকিবুর রহমানকে নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ১১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। বিএসইসির তদন্তে সহায়তা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে লেনদেন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওই সময় দেখা যায়, আগের ১৪ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বাড়ে ৫৪ দশমিক দুই টাকা বা ১৫৫ শতাংশ।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ২১ আগস্ট বিএসইসি গঠিত কমিটি সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সময় বাড়িয়ে শাহজিবাজার পাওয়ারের প্রতিবেদন ২৫ আগস্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়।
বেশ কয়েক দিন লেনদেন বন্ধ রাখার পরও শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকায় গত বছরের ৯ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় কমিটি গঠন করে বিএসইসি। পরিচালক রেজাউল করিম ও শামসুর রহমান সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। সে প্রতিবেদন অনুযায়ী গোলাম মোস্তাফা ও নাসিমা আক্তার লতাকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে ইতিবাচক মতামত পেলে শিগগিরই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
আলোচিত এ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ার স্পট মার্কেটে লেনদেন করার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। পাশাপাশি এ সিকিউরিটিজকে নন-মার্জিনেবল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও তা পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বাড়ার পেছনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়। যা বিএসইসির ৫৩৩তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে শাহজিবাজার পাওয়ারের আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য প্রকাশের দায়ে কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা করে এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
বিএসইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিএসইসি সরাসরি মামলা করতে চেয়েছে। কিন্তু বিধান না থাকায় মামলা করতে পারছে না। এদিকে কারসাজির ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করার লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সরাসরি মামলা করার ক্ষমতা চায় বিএসইসি। এজন্য শেয়ারবাজার-সম্পর্কিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
পুঁজিবাজারে কারসাজির ঘটনা বিচারে সাধারণত নিম্ন আদালতে মামলা করে বিএসইসি। নিম্ন আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বহুদিন ধরে এ সংক্রান্ত অনেক মামলা ঝুলে আছে। পুঁজিবাজারে সুশাসন জোরদার করতে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ-১৯৬৯ সংশোধন করে জাতীয় সংসদ। অধ্যাদেশের ২৫ ধারায় সেকশন ২৫(বি) সংযোজন করে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
ডিএসইতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া শাহজিবাজার পাওয়ার গত অর্থবছরে শেয়ারহোলডারদের জন্য ৩৩ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ নগদ ও তিন শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। এ সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে পাঁচ টাকা ১৪ পয়সা। আর এনএভি হয়েছে ৩২ টাকা ছয় পয়সা। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির এজিএম অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড ডেট ছিল ৫ ডিসেম্বর।
Add Comment