শাহবাগে অবস্থানে আট দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার-বিভাগীয় তদন্তসহ আট দাবিতে শাহবাগে গণ-অনশন, অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নানা সংগঠন।

গতকাল সকাল ৬টা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে এ কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান-অনশন করার পর প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড় আটকে রেখে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ করা হয়।

এর আগে সাড়ে ১২টার দিকে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির এসব অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নানা সংগঠনের প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভে শাহবাগ মোড়ের চারপাশে সড়কে তীব্র যানজট হয়।

কর্মসূচিতে থেকে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ঘোষিত আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকায় চল’ সেøাগানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয় কর্মসূচিতে।

এছাড়া আগামী ৪ নভেম্বর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্যামাপূজায় দীপাবলী উৎসব বর্জন করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে স্ব স্ব মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির-মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী সেøাগান সংবলিত ব্যানার টানানোর প্রতিবাদী কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানানো হয়।

আট দফা দাবিগুলো হলোÑ১. শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

২. সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে অন্যূন ২০ লাখ টাকা প্রদান বিকল্পে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের রোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৫. সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৬. প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৭. ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮. ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এই হামলা শুধু হিন্দুদের ওপর হামলা নয়, গোটা বাঙালির ওপর হামলা। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের একটা অংশ এর জন্য দায়ী। প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক কর্মচারীদের নিষ্ক্রিয়তা চিহ্নিত করে, তদন্ত করে বিচার করতে হবে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘হামলার পর আমি রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, সেখানে তারা বলেছে- ‘আমাদের মা আসবে কবে?’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি তাদের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সংহতি জানান। আর মুসলমানদের মধ্যে যারা হামলা করেছে, তাদের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া। প্রত্যেক মসজিদের ইমামকে বলতে হবে এগুলো অনৈসলামিক কাজ হয়েছে।’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘আগে যে সব হামলা হয়েছিল, সেগুলোরও বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই হামলার বিচার করতে হবে। আমাদের আট দফা দাবি দ্রুত মেনে নিতে হবে।’

কর্মসূচিতে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিনা আক্তার, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অরুণ কুমার বক্তব্য দেন।

কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ পূজা উদ্?যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, জš§াষ্টমী উদ্?যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম ও হিন্দু ছাত্র ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংরক্ষণ সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল শ্রী শ্রী হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ অংশ নেয়। ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশে গতকাল এ কর্মসূচি পালিত হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০