জাকারিয়া পলাশ : আজ বসন্তের প্রথম দিন। বাঙালির মনে তাই উৎসবের দোলা। এই উৎসব মুখরতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাঙা হয়েছে ফুলের বাজার। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ফুলের দোকানগুলো দেখে সহজেই তা অনুমান করা যায়। আর বসন্তের প্রথম দিনের পরই আগামীকাল (মঙ্গলবার) আসছে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। এ দিনগুলোকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা তুঙ্গে। চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে ফুলের সরবরাহ বেড়েছে গত কয়েক দিনে।
পরের সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য দেওয়ার দিন। ওইদিনও ভালো ব্যবসার আশা করছেন শাহবাগের ফুল বিক্রেতারা। বছরজুড়ে তাই এ সময়ের অপেক্ষায় থাকেন তারা।
বিক্রেতারা বলছেন, বছরে এই তিনটি দিনই সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়। এ দিনগুলোর জন্য তারা অপেক্ষা করেন সারা বছর। রাজধানীর শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আজ সোমবার সূর্যোদয়ের শুরু থেকে ফুল ক্রেতারা এসে ভিড় করবেন বিভিন্ন দোকানে। সেজন্য গতকাল রোববার থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।
ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের স্বত্বাধিকারী আশিকুর রহমান নান্টু একজন পাইকারি ফুল বিক্রেতা। তিনি বলেন, বসন্ত উপলক্ষে হলুদ ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এজন্য আগে থেকেই গাঁদা ফুল জমিয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণত লালচে, খয়েরি ও হলুদ রঙের গাঁদা আসে বাজারে। এর মধ্যে বসন্তে হলুদ ফুলের চাহিদা বেশি হওয়ায় তার দামও বেশি। সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল লালচে রঙের একশ গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে দুইশ টাকায়। আর হলুদ গাঁদার শ’ বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। তবে বসন্ত শেষে গাঁদা ফুলের কদর কমবে। পরের দিনটি হবে গোলাপের দিন। গতকালের পাইকারি বাজারে গোলাপের দাম ছিল শ’প্রতি পাঁচশ টাকা। তবে আজ তার দাম আরও বেশি হওয়ার কথা। এছাড়া রজনীগন্ধার স্টিকের একশটির দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। সাধারণত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথিকে শুভেচ্ছা জানাতে রজনীগন্ধার স্টিক ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চেরি, জিপসি, গ্লাডিওলাস পাওয়া যায়।
বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে প্রতিটি ফুলের দাম দু-এক টাকা বৃদ্ধি পায়। শাহবাগে প্রায় ১৫ জন পাইকারি বিক্রেতা রয়েছেন। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে তারা পাইকারি বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করেন। তারাই পাইকারি ফুলের দাম নির্ধারণ করে থাকেন। তাদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। শাহবাগেই সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত খুচরা দোকান রয়েছে ফুল বিক্রির জন্য।
সেখানকার খুচরা ব্যবসায়ী মেশকাত হোসেনের দোকানের নাম গ্রামীণ ফ্লাওয়ার শপ। তিনি জানান, বসন্তের পরের দিন ভালোবাসা দিবস। এ দিন উপলক্ষে রাতেই ক্রেতারা আসতে শুরু করবেন। অনেকে মধ্যরাতে ফুল নিতে আসবেন। গতকালের বাজারদর অনুসারে প্রতিটি গোলাপের খুচরা দাম ছিল ৫ থেকে ৭ টাকা। তবে আমদানি করা গোলাপের একেকটির দাম ২০ থেকে ৫০ টাকাও দেখা গেছে। এছাড়া ডালিয়া ফুলের প্রতিটি স্টিকের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। দোকানিরা জানান, প্রতিদিন গড়ে ছয়-সাত হাজার টাকা বিক্রি হয়। বিশেষ দিনে এই পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিক্রেতা বাড়ার পাশাপাশি এদিন ফুলের দামও বেশি হবে। এছাড়া বসন্তের দিনে তোড়া বা মুকুট বানিয়েও বিক্রি হয় ফুল। একটি গোলাপ আর দুটি ছোট ফুল মিলিয়ে বানানো মুকুটের দাম হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
শাহবাগের অপর এক দোকানি জীবন জানান, বিশেষ দিবসে বেচাকেনা সবসময়ই ভালো হয়। এ সময় ফুলের চাহিদার কমতি নেই। চাহিদা মেটানোর জন্য অনেক যত্ন করে ফুল সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু অন্য সময় ফুল নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হওয়ার কারণে যে লস হয়, তা পুষিয়ে নেওয়া যায় ফেব্রুয়ারি মাসে। জীবন বলেন, ‘অন্যান্য দিন খুচরা বিক্রি করে তেমন একটা লাভ হয় না। দু-একটি গাড়ি সাজানোর সুযোগ হলে কিংবা বড় ক্রেতা পেলে ভালো লাভ করা যায়।’ সাধারণত বিয়ের গাড়ি সাজিয়ে সবচেয়ে বেশি আয় হয় তাদের। একটি গাড়ি সাজিয়ে দিলে চার হাজার টাকা আয় হয়।
শাহবাগ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ফুলের দোকানিরা বিশেষ দিবসে ভালো বিক্রির আশায় আছেন। অনেকে অস্থায়ীভাবে ফুল বিক্রি করেন বিশেষ দিবস উপলক্ষে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একটি স্টেশনারি দোকানের মালিক দোলোয়ার হোসেন। তিনি শাহবাগ এসেছিলেন ফুল কিনতে। শেয়ার বিজকে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর এ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় সব জায়গায়। এজন্য দোকানেরই বাড়তি আইটেম হিসেবে ফুল বিক্রি করি এদিন।’
বিশেষ দিবসের ফুলের বাজার নিয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার ফেস্টের আয়োজক সংস্থা ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজেসের (আইআইসিএ) প্রোগ্রাম ম্যানেজার খান মোহাম্মদ ইলিয়াস শেয়ার বিজকে বলেন, ফুলের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১০ হাজার টন ফুল উৎপাদন ও বিপণন হয়। এর সিংহভাগই চাষ হয় যশোরে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার সাভারে ফুলের চাষ করেন অনেক কৃষক। বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০ হাজার কৃষক এই ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ দিবসে ফুলের এই চাঙা বাজার ফুলচাষ ও বিপণনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার জন্যই ইতিবাচক।