ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির বরগুনার পাথরঘাটায় শিক্ষক নিয়োগ, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর তালিকা ও নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন না দেয়াসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ)-এর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি পাথরঘাটা উপজেলায় ৭০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ২ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী নিয়ে ৭০টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে বাস্তবায়নকারী এনজিও আরডিএফ। এর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়–য়া। শিক্ষক নিয়োগে যারা আবেদন করেছিলেন তাদের পরীক্ষার নোটিশ না দিয়ে প্রকল্পের ম্যানেজারের সঙ্গে যাদের সমন্বয় হয়েছে তাদের জানানো হয়েছে এবং নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অনেককে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে জরিপ করিয়ে নিয়োগ না দিয়ে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য জন প্রতি মাসে ১২০ টাকা করে উপবৃত্তির বরাদ্দ থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী পায়নি এ টাকা। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ৭ মাসেও ও কোনো বেতন দেয়া হয়নি। জরিপের জন্য উপজেলায় আলাদা করে ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও জরিপকারীরা কোনো ভাতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক জরিপকারী।
সরেজমিনে শিখন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রে ৩০ জন করে ঝরেপড়া শিশু থাকার কথা থাকলেও কাগজে ছাড়া বাস্তবে কোনো কেন্দ্রেই ১০ থেকে ১২ জনের ওপরে নেই। কর্মসূচিতে নাম দেয়া হয়েছে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের। অনেকের নাম, বাবার নাম আছে কিন্তু বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। যারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী, তাদের ঝরেপড়া দেখানো হয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচির আওয়তায় ভর্তি করার বিধান নেই। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ হাজার টাকা বাজেটের একটি মধ্যে ফ্যান, স্থল ভাড়া ছাড়াও টিউবলাইট, পানির জার, স্টিলের ট্রাংক, সাইনবোর্ড, হাতলওয়ালা চেয়ার, টুল, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড, টিচিং এইডস এবং গেমস উপকরণ দেয়ার কথা থাকলেও কোনো কেন্দ্রেই এসবের কোনোটিই দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, আমাদের নিয়োগ দেয়ার পর প্রকল্প ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম (মিঠু) ও সুপারভাইজার মাহবুবকে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে। নিয়োগ দিয়ে কোনো ট্রেনিং না করিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়। শিক্ষকদের ৭ মাসের বেতন ও শিখন কেন্দ্রগুলোর ৭ মাসে কোনো ভাড়া দেননি, দেয়া হয়নি কোনো আসবাবপত্র। ২৫ ধরনের উপকরণ দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র ৮ ধরনের উপকরণ, তাও নি¤œ মানের। এসব মালামাল দেয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ভাউচার নেয়া হয়েছে। বেতন দেয়ার কথা বলে রেভিনিউতে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে, বেতন দেয়া হয়নি। বেতন চাইলে চাকরি যাওয়ার হুমকিও দেয়া হয়।
প্রকল্পের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম (মিঠু) বলেন, শিক্ষার্থী তালিকায় কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র আমরা নেইনি। হয়তো এরা পরে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্রদের নেয়া হয়েছে। ঝরেপড়া শিশুদের তালিকা করে কেন্দ্রের পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। ঘুষ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। তারা কোনো টাকা নেননি।
এ প্রসঙ্গে রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ)-এর যুগ্ম পরিচালক ও প্রকল্প প্রোগ্রাম হেড মো. এনামুল হক এসব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, শিখন কেন্দ্রগুলোতে সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় শিক্ষকদের বেতন ও স্থল ভাড়া ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয়নি। টাকা ছাড় হলে সবার টাকা দেয়া হবে। নিয়োগের সময় কেউ যদি শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে থাকে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, কেউ আমার কাছে কোনো অভিযোগ দেইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সহকারী পরিচালক জিহাদুল ইসলাম জিহাদ বলেন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নাম ঝড়ে পড়ার তালিকায় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো শিক্ষার্থী থাকে তা খোঁজ নিয়ে বাতিল করা হবে, এসব শিক্ষার্থী টাকা পাবে না। কেবল যে শিক্ষার্থী সঠিক হবে তাদের নামেই উপবৃত্তির টাকা যাবে।