Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:06 am

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কোন্নয়ন জরুরি

বাদশা আলমগীর কর্তৃক শিক্ষককে মর্যাদার আসনে বসানোর কাহিনীটি আমাদের সবারই জানা। ছেলে শিক্ষককে সম্মান প্রদর্শন করায় আলমগীর শিক্ষকের কাছে জানতে চায়, সৌজন্যবোধে কোনো ত্রুটি ছিল কি না। তখন শিক্ষক তার মত ব্যক্ত করেন ঠিক এভাবে,

উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে

কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-

‘আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,

সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।’

দেশে পেশাগত দিক বিবেচনায় শিক্ষকতাকে মহৎ ও মহানের কাতারে রাখা হলেও শিক্ষকদের অধিকার রক্ষায় সচেতন নয় সরকার। শিক্ষার মহত্ত্ব সবাই স্বীকার করলেও শিক্ষকদের অধিকার রক্ষায় নিশ্চুপ সংশ্লিষ্ট মহল। প্রাপ্ত বেতন-ভাতা পর্যাপ্ত না হওয়ায় চরম বেকায়দায় আছেন শিক্ষক সমাজ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। বাড়েনি শিক্ষকদের আয়। উপযুক্ত পরিস্থিতিতে মহার্ঘ্য ভাতা দেয়া একান্ত প্রয়োজন হলেও দৃষ্টি নেই শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর। মহৎ এ পেশায় নিয়োজিত মানুষ গড়ার কারিগরদের এমন বেকায়দায় ফেলে রাখা অবমূল্যায়নের শামিল। প্রকৃত অর্থে ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ বিষয়টি স্বীকার করা হচ্ছে। কিন্তু মানসিক শ্রমের স্বীকৃতি এবং যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সম্মান ও তাদের জন্য পর্যাপ্ত বেতনের ব্যবস্থা না করে সরকারের আমলা-মন্ত্রীরা মন্তব্য করছেন ঘটনা চক্রে অনেকেই বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতা পেশাকে। এমন মন্তব্য করা যে কতটুকু অনুচিত সেটিও ভাবনায় আনছে না কর্তৃপক্ষ। শুধু আমলা-মন্ত্রীরা নন শিক্ষক নিধনকার্যে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরাও। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে সাভারের আশুলিয়ায় জিতু নামের এক শিক্ষার্থীর স্টাম্পের আঘাতে উৎপল কুমার নামের কলেজ শিক্ষকের মৃত্যুর সংবাদ। তাছাড়া লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীর বাবা কর্তৃক শিক্ষকের মাথা ফাটানো, দেশের অপর প্রান্তের আরেকটি জেলায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে হাঁটানোর সংবাদও হয়েছে সবার দৃষ্টিগোচর।

এ সংবাদ নিয়ে রয়েছে হরেক রকমের মতো। অনেকে বলছেন, শিক্ষকরা তাদের যে শিক্ষা দান করেছেন তাই তারা করছে। এতে শিক্ষা গ্রহণকারীদের দোষ কোথায় এমন প্রশ্নও করছেন অনেকে।

তবে ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে সুন্দর এবং নিবিড় সম্পর্ক থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, একজন ছাত্রকে শিক্ষক শুধু একাডেমিক পাঠদানই করেন না, বরং বাস্তবজীবনে অনেক দিকনির্দেশনাও দিয়ে থাকেন। আবহমান কাল থেকেই ছাত্র-শিক্ষকদের এমন নিবিড় সম্পর্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক আসলে প্রত্যাশিত অবস্থানে নেই। ছাত্ররা তার শিক্ষকদের সম্মান করবে এবং শিক্ষকরা ছাত্রদের সন্তানের মতো দেখবে এটাই স্বাভাবিক। ছাত্র ভুল করলে শিক্ষক সে ভুল সংশোধন করে দেয়ার জন্য কৌশলে তাকে বুঝাতে পারে এবং শিক্ষক ভুল করলে শিক্ষার্থী তাকে ভদ্রভাবে, বিনয়ের সঙ্গে ভুলটা ধরিয়ে দিতে পারে। বাস্তবতা যদি এমনই হতো, তাহলে দেশের স্কুল, কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতো না। পাবলিক কিংবা প্রাইভেট অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে শিক্ষকদের হাতে ইনকোর্স, প্রাকটিক্যাল নম্বর থাকে, কখনও শাস্তিস্বরূপ শিক্ষার্থীদের নম্বর কম দেয়া হয়। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক আছেন যাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে, টেস্ট পরীক্ষাতে ফেল করিয়ে দেয়া হয়। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ তারা হয়তো এমন দুর্ভোগের মুখোমুখি বেশি হয়। পক্ষান্তরে, কিছু ছাত্রছাত্রী আছে, যারা সারাক্ষণ আড্ডা এবং অনলালাইনে সময় কাটায়, ঠিকমতো লেখাপড়া করে না, তাদের ফেল করিয়ে দিলে আবার শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়। চড়াও হওয়ার এ ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এমন সংবাদ পুরো জাতিকে করেছে মর্মাহত। হƒদয়ের এ রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ার নয়। এ অবস্থায় অসাধু শিক্ষক ও বিপথগামী শিক্ষার্থী চিহ্নিতকরণপূর্বক কাউন্সেলিং প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কোন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

জিহাদ হোসেন রাহাত

শিক্ষার্থী, প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী কলেজ

লক্ষ্মীপুর