Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:54 pm

শিক্ষক হোন শিক্ষার্থীবান্ধব

শিক্ষার্থীর কাছে মা-বাবার পর সম্মানের স্থানে থাকেন শিক্ষক বা তার গুরুজন। একজন শিক্ষককে মা-বাবার সমতুল্য করে দেখা হয়। শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মানবসন্তানের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় পরিবার থেকে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা নেয়ার জন্য সবাইকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যেতে হয়। যেখানে সবার অভিভাবক হিসেবে দায়ি?ত্ব পালন করেন সেই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা। তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের শেখান কীভাবে একজন প্রকৃত মনুষ্যত্ব সম্পূর্ণ মানুষে পরিণত হওয়া যায়। আমাদের আচার-আচরণ কীরূপ হওয়া উচিত। বয়সভেদে কাকে কীভাবে সম্মান, স্নেহ করা উচিত। মূলত জাতি গড়ার কারিগর তারাই। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব লোক নিয়োগ দেয়া হয় তাদের প্রধান কাজ হলো শিক্ষার্থীদের মঙ্গলার্থে কাজ করা। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তৈরি করছে বাসাবাড়িতে, হলের ডাইনিং বন্ধ রেখে করছেন মেয়ের গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের পানির লাইন কিংবা বিদ্যুৎ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। সুযোগ পেলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে নিজের স্বার্থ হাসিলের কাজে। প্রতিটি কর্মকর্তা, কর্মচারী কাজ করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মন জয় করে কীভাবে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা যায়। শিক্ষার্থী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করার যেন সময়ই নেই তাদের কাছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন চাকরি নেয় বাধ্য হয়ে। জীবনধারণের জন্য অর্থের প্রয়োজন। শেখানোর নেশা যেন বিলীন হয়ে গেছে। একজন যোগ্য নাগরিক হয়ে তোলার ইচ্ছাই যেন আর নেই। শিক্ষার্থীদের বিপদে একজন শিক্ষকের যেমন ঘুম হারাম হয়ে যেত; আজ যেন তা কল্পনা শিক্ষকছাত্রকে  চেনে না, ছাত্র শিক্ষককে চেনে না। শিক্ষক ছাত্রের যে মধুর সম্পর্ক তা আজ বিলীন। স্কুল, কলেজ পর্যায়ের কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যেন খাতায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে দায় সেরেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কিছুই যেন করার নেই তাদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় কমিটি, প্রশাসনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী। যাদের জন্য এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাদের যেন কোনো মূল্যই নেই কমিটি, প্রশাসনের কাছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা না দেয়া হলেও অর্থ আদায়ে একটুও দেরি করে না তারা। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান নিয়ম-কানুন অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত। শিক্ষার্থী কী চায়? কোন পদ্ধতি অনুসরণ করলে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করবে এবং ভালো ফলাফল করবে এ বিষয়গুলো নির্ধারণ করার জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও ক্লাসে শিক্ষার্থী সংকট। কেন এমন হয় একবার কি ঠান্ডা মস্তিষ্কে ভেবে দেখেছেন?  সব মানুষ চায় নতুনত্বের সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত করতে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসগুলো চলাকালে অধিকাংশ শিক্ষক পাঠ্যপুস্তক থেকে লাইন বাই লাইন রিডিং পড়ে যায়, যা খুবই বিরক্তিকর। ঢাকার শহরের মতো স্থানে জ্যাম ঠেলে এসে অর্থদণ্ড দিয়ে যদি সেই রিডিং বই পড়তে হয়। তবে বাসায় অবস্থান করে খাবার খেয়ে একটা গভীর ঘুম দিয়ে উঠে এক টানা ২-৪ ঘণ্টা পড়াই উত্তম। কেন সময় অপচয় করে, বিরক্তিকর যানজট ঠেলে, অর্থ খরচ করে ক্লাস করা। বাসায় বসে সুন্দরভাবে পড়ালেখা চালিয়ে গিয়ে, পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিলেই হয়! পরীক্ষার হলে আবার শিক্ষকদের বাসাবাড়ির আলোচনা। কোন তরকারিতে লবণ কম হয়েছে। কার শাশুড়ি, ননদ ঝগড়াটে। কার স্বামী কত বড় পদে চাকরি করে। কোন সহকর্মীর ব্যবহার ভালো নয়। কার মেয়েকে কীভাবে স্কুলে দিয়ে আসা হলো। কার মেয়ে খাবার খেতে চায় না। কার আত্মীয় কোথায় কী করছে ইত্যাদি। মাঝে মধ্যে মনে হয় তারা কি আদো কোনো সময়ে শিক্ষার্থী ছিলেন? শিক্ষার্থীদের ভালো লাগা, খারাপ লাগার বিষয়গুলো তারা বুঝতে পারে না। পরীক্ষার হলে বসে উচ্চস্বরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কিচ্ছা, কাহিনি, গল্প আর হাসাহাসিতে মেতে উঠে তারা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর জন্য বিরক্তিকর। সুন্দর জাতি গঠনে দায়িত্বপরারণ শিক্ষকের বিকল্প নেই।

ইমন হাওলাদার

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ