শিক্ষাক্রমের বিতর্ক এড়িয়ে সমাধানে উদ্যোগী হোন

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ শীর্ষক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আলোচনা, যা দিয়ে চলছে বিতর্ক। বইয়ের এ অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ অংশের তথ্য দিয়ে  কোমলমতি শিশুদের মগজ ধোলাইয়ের অভিযোগ তুলেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন এক শিক্ষক। গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে ওই শিক্ষক অভিযোগ করেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি ওই বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ অংশের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন।

এর জেরে চাকরিচ্যুত হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত এবং ওই শিক্ষকের পক্ষে-বিপক্ষে এই মধ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন বিভিন্ন পক্ষ।

এর মধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আলোচিত শরীফার গল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এবং কোনো বিভ্রান্তি থাকলে পরিবর্তন করা হবে। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি সহযোগী একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে নতুন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজন হলে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পদ্ধতি পরিবর্তন করা হবে। এটি কোনো স্থায়ী বিষয় নয় যে, আমরা জেদ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেব। যতটুকু নমনীয়তা প্রয়োজন, ততটুকু অবশ্যই করা হবে। এটি নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কারণ রাষ্ট্র কারও সঙ্গে জেদ করতে পারে না।

আমরা বিশ্বাস করি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সব পক্ষই শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টির সমাধানে তৎপর হবে। শিক্ষামন্ত্রীর অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই।

শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানে বাংলার আবহমান ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য যাতে ক্ষুণ্ন না হয়। বিশ্বশান্তি ও ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য প্রয়োজন মানবাধিকার সংরক্ষণ। ইসলাম ব্যক্তি-মানুষের সম্মানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করে। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, সব মানুষ ভাই ভাই। কারণ সবাই একই পিতা-মাতার সন্তান। ইসলাম ভৌগোলিক, আঞ্চলিক,  নৃতাত্ত্বিক, জাতিগত প্রভেদে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সমর্থন করে না। ইসলামে কোনো প্রকার শ্রেণিবৈষম্য নেই, নেই কোনো অস্পৃশ্যতার স্থান। ইসলাম যেহেতু মানুষকে জাতি ও বর্ণ দিয়ে বিচার করে না; বরং তার বিশ্বাস ও কর্মের মূল্যায়ন করে। তাই আশা করা যায়, শরীফার গল্প নিয়ে কোনো ধর্মীয় বিতর্ক হবে না। মনে রাখতে হবে ইসলাম শান্তি, মৈত্রী ও সম্প্রীতির ধর্ম। সরকারে উচিত হবে  নতুন শিক্ষাক্রমে ইসলামের মৌল বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তেমন কিছু সংযোজন না করা। কোনো পক্ষ যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করতে পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সতর্ক হতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য, শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার কলাকৌশল ও মূল্যায়নব্যবস্থা পর্যালোচনা করে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এ আগে যেসব শিক্ষাক্রম দেশে বাস্তবায়িত হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় নতুন শিক্ষাক্রম বিজ্ঞানভিত্তিক, সময়োপযোগী। এ বিষয়ে আমাদের আলাদা পর্যবেক্ষণ নেই। আমরা কোনো ধর্মীয় বিষয়ে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানাই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০