র্যাগিংয়ের অভিযোগে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) পাঁচ মাসে ১২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে। বৃহস্পতিবার চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাবিপ্রবির সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীরা। জানা গেছে, নবাগত ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন একই বিভাগের ২২ ব্যাচের অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। নিজ বিভাগে প্রভাব খাটানোর জন্য শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অপরাধ করেছেন। তদন্তে প্রমাণ পেয়ে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তো বটেই, সাধারণ মানুষের কাছেও র্যাগিং পরিচিত। দৃষ্টান্ত থেকেই বলা যায়, এটির পক্ষে একটি শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। এখন র্যাগিংয়ের সমার্থক শব্দ হলো উত্ত্যক্ত করা। জ্যেষ্ঠরা আদবকেতা শেখানোর নামে নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন সব আচরণ করেন, যা শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কেউ আশা করেন না। নানা বাহানায় র্যাগিং ও বুলিংয়ের ঘটনা ঘটে। র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া অনেক শিক্ষার্থীর মানসিক স্থিরতা ভেঙে পড়ে। র্যাগিং বন্ধ না হওয়ার জন্য আমাদের সমাজ অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। কারণ সামাজিক মূল্যবোধের অভাব। ধর্মীয় ও নৈতিকতার শিক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে এবং পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি অনুসরণ করছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজকে দূষিত করে ফেলছে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে যেভাবে র্যাগিংয়ের যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে মনে হয় এটিই কারও কারও ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান কাজ। নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব দেখাতে তারা বেছে নেন নবীন শিক্ষার্থীদের। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই র্যাগিংয়ের মতো অনাকাক্সিক্ষত বিষয় ঠেকাতে শূন্য সহনশীলতায় ব্যবস্থা নেয়নি।
র্যাগিংয়ের সব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে না। উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও তাঁর অভিভাবকেরা যতটা সম্ভব মুখ বুজে মেনে নেয়ার চেষ্টাই করেন। এটি ঠিক, সরকারের একার পক্ষে র্যাগিং বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার অন্য বিষয়ে কঠোর হলেও র্যাগিংয়ের বিষয়ে উদাসীন বলে প্রতীয়মান হয়।
র্যাগিং বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আছে। র্যাগিংয়ের ক্ষতিগ্রস্তদের দীর্ঘশ্বাস- হতাশাও আছে। সরকার চলতি বছরই ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ-সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২৩’ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বুলিং ও র্যাগিং উৎসাহিত হয় এরূপ কোনো কার্যকলাপ, সমাবেশ ও অনুষ্ঠান করা যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব জায়গায় বুলিং ও র্যাগিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেসব জায়গায় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করবে। ‘বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে বুলিং ও র্যাগিংয়ের কুফল সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সবাইকে সচেতন করবে।
নিয়মানুযায়ী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা বুলিং ও র্যাগিং বন্ধে শপথ নিয়েছেন। তবু র্যাগিং চলছে। আমরা আশা করি, যারা র্যাগিং করে তাদের ওপর সরকারের কোনো ধরনের আনুক‚লক্ষ্য থাকবে না। আইনের শাসন নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।