নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। কোনো কোনো সবজির দাম হয়েছে দ্বিগুণ। এজন্য টানা বৃষ্টি ও চলমান ছাত্র অন্দোলনকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমির ফসল। সেইসঙ্গে চলমান ছাত্র আন্দোলন ও পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজির গাড়ি রাজধানীতে আসতে না পারায় বাজারে নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ। আর মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাজারের এমন পরিস্থিতিতে নাকাল সাধারণ মানুষ।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারগুলোতে বেশিরভাগ সবজির দামই কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। তবে আগের তুলনায় কমেছে মরিচের দাম। কোনো সবজিই মিলছে না ৪০ টাকা কেজির নিচে। গত সপ্তাহে পটোল, ঝিঙা, ধুন্দল, কাঁকরোল ও করলা বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। তবে এখন সবকটির দামই ৫০ ছুঁইছুঁই। তবে বেগুন ও পেঁপের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ দুটি সবজি ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজির মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটোলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। ঝিঙা ও ধুন্দলের দামও বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এ সবজি দুটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল।
এদিকে বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো ও কাঁচামরিচ। প্রতি কেজি টমেটোর জন্য ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর কিছুটা কমেছে কাঁচামরিচের দাম। গত কয়েক সপ্তাহে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
যাত্রাবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী মো. হারুন মিয়া বলেন, বাজারে এখন সব সবজিই পাওয়া যাচ্ছে, তবে সরবরাহ কিছুটা কম। সে কারণে দাম কিছুটা বেশি। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেশকিছু ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এর সঙ্গে এখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। অনেকেই সবজিবোঝাই পরিবহন আনতে ভয় পাচ্ছেন, যে কারণে চাহিদার তুলনার বাজারে সবজির সরবরাহ কম। সবকিছু মিলিয়ে সবজির দাম বেড়ে গেছে।
মুদিপণ্যের মধ্যে কিছুটা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। এতে অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
কিছুটা বেড়েছে মাছের দামও। বাজারগুলোতে বড় কাতলা মাছ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট কাতলা ২২০ থেকে ২৮০, কার্প মাছ কেজিতে ২০০, বড় রুই ৩৫০, ছোট রুই ২২০, আকারভেদে চিংড়ি ৯০০ থেকে এক হাজার ২০০, চাষের শিং ৪০০ থেকে ৫০০, কই ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভরা মৌসুম হলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না ইলিশের সরবরাহ, যা পাওয়া যাচ্ছে তাও সাধারণের সাধ্যের বাইরে। এক কেজি একটি ইলিশের জন্য বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছেন এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা।
এসব বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ক্রেতা শামসুজ্জামান বলেন, মাসের কেবল শুরু। এখনও বেতন হয়নি। একদিকে পরিবহন ধর্মঘট, অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে আমরা দিশাহারা।
এদিকে গত সপ্তাহের মতোই ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডিমের ডজন। সেইসঙ্গে সাদা ব্রয়লার মুরগি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা এবং লাল লেয়ার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 3:52 am
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অজুহাতে ঊর্ধ্বমুখী বাজার
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: