আবদুল হাকিম আবির: সেবা লাভে উচ্চমূল্যের ফি পরিশোধ করার শর্ত থাকার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইবার সেন্টার ব্যবহারের সুবিধা নিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। সাইবার সেবা নিতে ৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠার সময়ে নির্ধারিত ঘণ্টাপ্রতি ১২ টাকা ফি এখনও বহাল। গেল কয়েক বছরে তথ্যপ্রযুক্তির সেবার খরচ কমেছে কয়েক ধাপে। অথচ ঢাবির সাইবার সেন্টার এখনও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক দশক আগে নির্ধারিত ফি নিচ্ছে। উচ্চমূল্যের কারণে এ সেবার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দিনদিন কমছে। ফলে বছরে কয়েক লাখ টাকা বরাদ্দের এ সাইবার সেন্টারটির সুফল পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির সেবা দিতে ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশেই প্রতিষ্ঠা করা হয় সাইবার সেন্টারটি। শুরুর দিকে সাইবার সেন্টারটি শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে এখন সে চিত্র ভিন্ন। পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, শিক্ষার্থীর অভাবে বেশিরভাগ সময়ই অব্যবহƒত থাকে সাইবার সেন্টারের কম্পিউটারগুলো।
সাইবার সেন্টার কার্ড ইস্যু বই সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে ২৭৩ জন শিক্ষার্থী সাইবার সেন্টারের সেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৫৬ জন ও এপ্রিলে ৬৬ জন এখান থেকে সেবা নিয়েছেন। আর জুন মাসে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭০ জন। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দুজন শিক্ষার্থীও সাইবার সেন্টার থেকে সেবা গ্রহণ করছেন না।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইবার সেন্টার ব্যবহারে অতিরিক্ত ফি ও বিভিন্ন কাগজপত্র প্রিন্ট করার সুবিধা না থাকায় এখানে আসছেন না তারা। সাইবার সেন্টারের প্রতি অনাগ্রহের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইনতিশার সাক্ষর বলেন, এখানে কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য প্রতি ৩০০ মিনিটে ৬০ টাকা করে দিতে হয়। বাংলাদেশের কোথাও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মূল্য এত বেশি কি না, আমার জানা নেই। এছাড়া কোনো অ্যাসাইনমেন্ট কম্পিউটারে কম্পোজ করার পর তা প্রিন্ট করার ব্যবস্থাও নেই সেখানে। সব মিলিয়ে সাইবার সেন্টারটি শিক্ষার্থীবান্ধব নয়।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২৫টি কম্পিউটার থাকলেও মাত্র একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন সাইবার সেন্টারে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় কিছু কম্পিউটারে ধুলা জমেছে। আবার কিছু কম্পিউটার অকেজো হয়ে যাওয়ায় ফেলে রাখা হয়েছে। এদিকে ব্যবহার না করায় কম্পিউটারগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. এস এম জাবেদ আহমদ বলেন, এখন হাতে হাতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ফ্রি ওয়াইফাই থাকায় কম আসছেন শিক্ষার্থীরা। তবে সবার তো ব্যক্তিগত কম্পিউটার নেই। তাই ফি কমালে শিক্ষার্থী সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে। আর প্রিন্টারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।
গ্রন্থাগার অফিস সূত্রে জানা যায়, আগে সাইবার সেন্টারে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হতো তার জন্য প্রতি মাসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহƒত সফটওয়্যারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট (আইআইটি) বিনা মূল্যে করে দেয়। সে হিসেবে সাইবার সেন্টারটির পরিচালনা ব্যয় কমলেও কমানো হচ্ছে না সেবামূল্য।
এদিকে বেশ কিছু কম্পিউটার অকেজো হয়ে পড়ায় কারণে ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সাইবার সেন্টারটি বন্ধ গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে। কম্পিউটার মেরামত না করায় বন্ধ রয়েছে সেন্টারটির প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও। ফলে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খসে পড়েছে সেন্টারের ছাদ ও দেয়ালের আস্তরণ।
কার্যক্রম বন্ধ থাকার ব্যাপারে টিএসসি সাইবার সেন্টারের সাবেক পরিচালক ও কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, সাধারণত একটি কম্পিউটারের সর্বোচ্চ মেয়াদ ধরা হয় পাঁচ বছর। টিএসসি সাইবারের কম্পিউটারগুলো এক যুগেরও বেশি সময়ের পুরোনো। তাই এগুলো দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
জানা যায়, ২০০৩ সালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাইবার সেন্টারটি স্থাপন করা হয়। ওই সময় ২৫টি কম্পিউটার নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ায় আরও ১০টি কম্পিউটার সংযোজন করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ কম্পিউটারই এখন অকার্যকর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারগুলো মেরামত না করায় ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে বন্ধ সেন্টারটির কার্যক্রম।
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের সেরা বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সাইবার সেন্টারগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে সেবা পায়, সে ব্যাবস্থা করার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Add Comment