শোবিজ ডেস্ক: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে ফুটপাতে বাস উঠিয়ে দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিসহ ৯ দফা দাবিতে কয়েকদিন ধরে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শিল্পীরা। পুলিশের উদ্দেশে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এত সাজ-পোশাকে জঙ্গি দমন করতে আসছেন?’ দুজন পুলিশ এক কিশোরকে লাথি মারছেন এমন একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কী বলব আপনাদের? হাতে অস্ত্র, মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, পায়েও হাঁটু পর্যন্ত গার্ড পরে আছেন। তারপরও কলেজ ড্রেস পরা নিরস্ত্র একটা বাচ্চাকে লাথি মারার জন্য মাথা পর্যন্ত পা তুলছেন। লজ্জা করে না আপনাদের? আপনার এত সাজ-পোশাকে জঙ্গি দমন করতে আসছেন? এতটুকু বাচ্চাদের এত ভয় পান? পুলিশ মানে তো আপনারা না! তাহলে আপনারা কারা?’
বুধবার সকালে নতুন প্রজন্মের অভিনয়শিল্পী তৌসিফ মাহবুব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আর চুপ থাকতে পারছি না। শুটিং থেকে অনুমতি নিলাম, দুপুরে নামছি তোমাদের সঙ্গে উত্তরায়। আমার কোনো সহকর্মী ভাইবোনেরা নামতে চাইলে খুশি হব।’ এ প্রজন্মের আরেক পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেছেন, ‘আজ না হয় শহরের স্কুল-কলেজের ছাত্রগুলো রাস্তায় নেমেছে, এতেই এ অবস্থা! কাল যদি সারা বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নামে, তখন কেমন হবে!’ সংগীতশিল্পী মাকসুদ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘বন্ধুদের অনুরোধ করছি, বাচ্চা বা পোলাপান এ শব্দগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করুন। এ একুশ শতকে এসব এবিউসিভ শব্দ সোজা কথায় গালি। ওদের বয়স আমাদের চেয়ে কম হতে পারে। কিন্তু মেধা, মনন ও ব্যবহারে আমাদের চেয়ে ওরা অনেক উচ্চ মানুষিক মার্গে বসবাস করে, এ কথাটা ভুলবেন না। ওদের মনের ধারের কাছেও আমরা ভিড়তে পারব না। এমনকি স্বপ্নেও না। ওদের সম্মান পেতে হলে আগে আপনারা সম্মান দিতে শিখুন।’
তিন দিন ধরে চলতে থাকা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও। তিনি বলেছেন, ‘বাচ্চা মানে বাচ্চা না, ভাইবোনেরা আমার! বেশ কিছু ভিডিওতে আন্দোলনরত স্কুল-কলেজের ছোট ছোট বাচ্চাদের কথা শুনে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছি কাহলিল জিব্রানের কবিতা। যেখানে লেখা হয়েছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পূর্ববর্তী প্রজন্মের চেয়ে এগিয়েই থাকে। তোমরা এগিয়েই আছো ভাইবোনেরা! লাভ ইউ।’ ফারুকী আরও বলেন, ‘জাবাল-ই-নূরের ঘটনায় অপরাধীর সাজা হতে হবে, শাজাহান খানকে ক্ষমতাশূন্য করতে হবে, এগুলো সবই দরকার। পাশাপাশি, দাবি তোলো সামগ্রিক সংস্কারের।’ চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড বলেছেন, ‘রাষ্ট্র প্লিজ থামুন। ওরা বাচ্চা। ওরা সবেমাত্র স্কুলছাত্র। ওরা আমাদের সন্তান। ওরা ধান্দাবাজ রাজনীতিক না। ওরা ব্যাংক লুটেরাদের বাঁচানোর পক্ষের কোনো শক্তি না। ওরা ধর্ষকের রক্ষক না। ওরা ক্ষমতা দখলের লোভে রাস্তায় না। ওরা শুধু ওদের বন্ধু-সহপাঠীর নির্মম মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেনি। ওরা বন্ধু হত্যার বিচার চায়। ওরা সড়কে জীবনের নিরাপত্তা চায়। এটা ওদের অপরাধ?’
এছাড়াও অভিনয়শিল্পী শাহনাজ খুশি, মেহের আফরোজ শাওন, নাট্যকার মাসুম রেজা, অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতি, চিত্রনায়ক নিরব, অভিনয়শিল্পী আসনা হাবিব ভাবনা, পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন, রওনক হাসান, পুলক অধিকারী, প্রিতম হাসান, শবনম ফারিয়াসহ অনেকেই শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
