প্রতিনিধি, রাবি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের পর নতুন রুপে সাজ পেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এক এক করে পাল্টে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোর চেহারা। শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে বদলে যাচ্ছে এসব দেয়ালের চিত্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবন, রাকসু ভবন, শহীদ তাজউদ্দীন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবন, ড. ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবন, ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কাজলা গেইটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়াল ও পুরো রাজশাহীর দেয়ালে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য ও ন্যায় ও স্বৈরাচার সরকারের প্রতি ঘৃণার বার্তা দিয়ে গ্রাফিতি এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় ‘সকল ছাত্রকে মুক্ত করুন’, ‘আমরা একসাথে বুলেটপ্রুফ’, ‘ব্লাডি বাংলাদেশ’, ‘লোহার আলমারি কে?’, ‘হাসিনাকে পদত্যাগ করুন’, ‘আমার স্বাধীন দেশে, কারো ঘর যেন জ্বলে না’, ‘৫২ দেখিনি ২৪ দেখেছি’, ‘আমরাই ভবিষ্যতে, আমরাই ইতিহাস’, ‘স্বৈরাচার সরকারেট পদত্যাগ’, ‘২৪ আমাদের চেতনা, স্বাধীনতা আমাদের অহংকার, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের কন্ঠস্বর’, ‘শোন মহাজন, আমি নইতো একজন, আমরা অনেকজন’, ‘তোমার আর আমার বিচার কে করবে?’, ‘এক্টিব রাকসু ভবন’, ‘স্বৈরাচার অপসারণ’ এমনসব প্রতিবাদী গ্রাফিতি অঙ্কন করতে দেখা যায় দেয়ালগুলোতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিসা তাবাসসুম বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে সরিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষ নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমার দেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী, প্রশাসন, শিক্ষক মহল থেকে শুরু সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এই সরকারের দাস ছিল। সুতরাং আমরা এই স্বৈরাচার সরকার পদত্যাগে আমরা খুব খুশি। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন সহ বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে গ্রাফিতি আঁকছি।
অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শৈকত খান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ প্রশাসনে থাকা সকল ব্যাক্তিবর্গ শেখ হাসিনা সরকারের দাস ছিল। তারা এই ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তাদের পদত্যাগে আমার মনে আনন্দে গ্রাফিতি অঙ্কন করেছি। এ ক্যাম্পাস আমাদের, আমরাই নতুন করে এ ক্যাম্পাস সাজাবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের এক শিক্ষার্থী হাবিব বলেন, চলমান আন্দোলনকে বাস্তবায়ন করতে অনেককে শহীদ হতে হয়েছে। তাদের স্বরণে আমরা গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনের কাজ করছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমার ভাইদের উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে সেই বিষয়ে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে এ দেয়ালগুলোতে।
এ বিষয়ে আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের প্রতিটি দেয়াল শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে আবারো নতুন করে জীবন্ত হলো। ছাত্র সমাজ করতে পারে না এমন কোন কাজ নেই। আজকে এ কাজগুলো করতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতেন প্রশাসন কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিমিষেই তা করে দিলেন। দেয়াল লিখনের পর রাবি ক্যাম্পাস এখন সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে উঠেছে।
