নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়ক নিরাপদ করতে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখিয়ে তারা সড়ক ছেড়েছেন রোববার (আজ) ফিরে আসার ঘোষণা দিয়ে।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আসাদগেট ও ধানমন্ডি ৭ নম্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায়ও বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ দেখান একদল শিক্ষার্থী। তাদের পরে বুঝিয়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড়ে সড়ক অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যায় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। বিক্ষোভ শেষ করে তারা হ্যান্ডমাইকে তাদের ৯ দফা দাবি পড়ে শোনান।
আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি পরে মাইকে বলেন, এ ৯ দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তারা। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিল।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেবে জানিয়ে আন্দোলনকারীদের ওই প্রতিনিধি বলেন, এ সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ওই দিন দুপুরে রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবে। তার আগে রবি ও সোমবার বিক্ষোভ চলবে এবং সড়কে গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স পরীক্ষা চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
এদিকে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাঁখারিবাজার মোড় হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ২০ মিনিটের মতো রায়সাহেব বাজার মোড় ব্লক করে সেøাগান দেয় শিক্ষার্থীরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ চলাকালীন শিক্ষার্থীরা পুলিশের গাড়ি, সদরঘাটগামী বাসগুলোর লাইসেন্স চেক করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমাদের জন্য হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়, মেয়ে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করা হয়, আমাদের দেখলে বাসের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এগুলো অতিসত্বর বন্ধ করতে হবে।
তারা বলেন, শুধু বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া দেয়া হয়েছে। এতে আমাদের কোনো লাভ হয়নি কারণ সদরঘাটে বিআরটিসির কোনো বাস আসে না। তাই উন্নত দেশগুলোর মতো সব ধরনের বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে যে ৯ দফা দাবি ছিল, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ওই প্রতিনিধি বলেন, এবার দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবার তারা নতুন কর্মসূচি দেবেন।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর থেকে বাসে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
গত বুধবার সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। বৃহস্পতিবার পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
সেদিন দাবি পূরণের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় দিয়ে রাস্তা ছাড়ে আন্দোলনকারীরা। এরপর শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে।
বেসরকারি বাসেও একই নিয়ম চালুর জন্য শনিবার বেলা ১১টার পর পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। তবে কোনো সিদ্ধান্তে তারা আসতে পারেননি।