নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্র ও পুলিশসহ কয়েকজন আহত হন। হামলার শিকার হন একজন গণমাধ্যমকর্মী।
গতকাল বেলা পৌনে ১১টার সময় রামপুরা ও আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন, হামলার শিকার হয়েছেন একজন সংবাদকর্মী। ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সরাতে টিয়ারশেল ছুড়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে মেরুল বাড্ডার দিক থেকে একদল যুবক লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে ওই যুবকরা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং সাধারণ পথচারীদের ওপর চড়াও হয়। স্কুলের পোশাক পরিহিত দুজনকে এ সময় পেটাতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
একপর্যায়ে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরাও সেখানে অবস্থান নেন। তারা শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বললে তারা না গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। পরে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভেতরে চলে যান। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত এক গণমাধ্যমকর্মীর ওপর চড়াও হয় একদল যুবক। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘হামলার’ প্রতিবাদে মিছিলে বাধা পেয়ে রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
হামলার প্রতিবাদে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর বিক্ষোভ মিছিল করেন ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী। দুপুর ১২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল শুরুর পর মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন, কার্জন হল, বুয়েট ঘুরে টিএসসি হয়ে বিকাল ৩টার দিকে তারা শাহবাগের দিকে অগ্রসর হন।
সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের আটকে দিলে বাগ্বিতণ্ডা এবং পরে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ তখন টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করেন। ইটের আঘাতে এক পুলিশ আহত হলে পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছোড়া শুরু করে। এরপর শুরু হয় পুলিশের লাঠিপেটা।
প্রায় ২০ মিনিটের এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দুই আন্দোলনকারীকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা যায় পুলিশকে। এরপর পুলিশ চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে টিএসসিতে চলে যান।
বেলা ৩টার পর এই সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য। পুলিশের এক সদস্যকেও ইটের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে যেতে দেখা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক যুবক শাহবাগ মোড়ে এসে রাস্তা বন্ধ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইট ছোড়েন। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের ইটের আঘাতে এ সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা শুরু হয়। এরপর থেকে বসুন্ধরা এলাকার ভেতরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বসুন্ধরা গেটের ভেতরে আটকে পড়া লোকজন সতর্কতার সঙ্গে বের হয়ে আসেন।
পুলিশ জানায়, বসুন্ধরা গেটের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় তারা অবস্থান নিয়েছিল যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। পরে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। পরে হামলাকারীরা বসুন্ধরার গেটের ভেতরে ঢুকে পড়লে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তবে কারা হামলা করেছে তা তারা এখনও জানেন না।
স্থানীয়দের ভাষ্য, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে প্রথমে একত্র হন। পরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গ্রামীণফোন অফিসের সামনে থেকে তারা পুলিশের ওপর প্রথমে হামলা চালায়। পরে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থী আন্দোলনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ
