Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 8:31 pm

শিক্ষার গুণগত মানের ওপর জোর দিন

যেকোনো ও সমাজের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে গুণগত শিক্ষা। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টতেও (এসডিজি) গুণগত শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সেই আলোকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে। তবে শিক্ষার গুণমানের তুলনায় এখনও পর্যন্ত পাসের হারের বিষয়েই সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। অন্তত গত রোববার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল থেকে তেমনটিই প্রতীয়মান হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পাসের হার বাড়ানোর চেয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক।

দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গতকাল এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, ফলাফলের গ্রেডিংয়ের সর্বোচ্চ ধাপ গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। গত দেড় দশক ধরেই পাসের উচ্চ হার পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ এসব উচ্চ গ্রেড অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের যে মাত্রার দক্ষতা অর্জন করার কথা ছিল, তারা তা করতে পারছে না মর্মে বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপেও উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণির উপযুক্ত মানের শিক্ষা অর্জন করতে পারছে না।

একটা সময় ছিল যখন এসএসসি ও এইচএসসিতে পাসের হার ছিল অনেক কম। এমনকি গ্রেডিং পদ্ধতিতে কোনো শিক্ষার্থী ন্যূনতম ২.৫ জিপিএ পেলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করা যেত। তখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশের বেশি পাস করতে পারত। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট খারাপ হওয়া সত্ত্বেও তারা যথেষ্ট মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জন করতে পারত। এরপর ভালো ফলাফল দেখানোর উদ্দেশ্যে ২০০৫ সাল থেকে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর মূল ফলাফলে যোগ করা শুরু হয়। পরে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাসের হার বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এর পরে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বাড়ানোর জন্য যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সেই প্রতিযোগিতার ফল যে ভালো হয়নি, তা প্রমাণিত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্য থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর অনুপাত ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কোনো ইউনিটে যতগুলো আসন রয়েছে, ততসংখ্যক শিক্ষার্থীও পাস করতে পারছে না। ফলে গ্রেস নম্বর দিয়ে তাদের পাস করাতে হচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া বর্তমানে দেশে সাধারণ শিক্ষার ব্যাপ্তি বেশি। এর স্থলে গুণগত কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেয়া আবশ্যক। কারণ জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত সবার জন্য যথাযথ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অথচ বাজারে কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন জনবলের ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।