Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 1:20 pm

শিক্ষা খাতের জন্য দরকার পূর্ণাঙ্গ ও পৃথক বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: উপবৃত্তির টাকার বরাদ্দ বাড়ানো এবং করোনায় শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার পাশাপাশি বাজেটে শিক্ষার সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড না যোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা। সেক্ষেত্রে তারা বলছেন, পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা বাজেটের কথা। এর পাশাপাশি শুধু বাজেট নয়, বাজেটের সঠিক বাস্তবায়ন এবং জবাবদিহির দাবি জানিয়েছেন তারা।

গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘শিক্ষার বাজেট: বাজেটের শিক্ষা’ শীর্ষক সংলাপে এসব দাবি তোলেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

আসন্ন বাজেট সামনে রেখে এ আলোচনার আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), এডুকেশন ওয়াচ  ও গণসাক্ষরতা অভিযান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

সভায় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, আমরা মূলত আজকে এখানে বসেছি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষাব্যবস্থা কোন পর্যায়ে আছে সেটি জানতে এবং শিক্ষা বাজেট আগামীতে কেমন হবে তার রূপরেখা দিতে। এটি বিশ্লেষণ করে গিয়ে আমরা দেখলাম, সরকার যখন কোনো বাজেট করে তা কোনো পৃথক বাজেট করা হয় না। এছাড়া যখন এ বাজেট করা হয়, তখন মাঠপর্যায়ে কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা হয় না। তাই আমরা বলতে চাই, শিক্ষায় এবার পূর্ণাঙ্গ ও পৃথক বাজেট করা হোক। শিক্ষার সঙ্গে যেন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোনো বাজেট দেয়া না হয়।

এ সময় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রতিবছর আমরা দেখছি গড়ে শিক্ষা বাজেটে জিডিপির এক দশমিক চার শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়। আমরা মনে করছি, এবার সেই বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। যেহেতু আমরা ২০২৬ সালে গ্র্যাজুয়েশন করতে যাচ্ছি,  তাই আমরা মনে করছি সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের বাজেট করা উচিত। এসময় সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মুনতাসির কামাল মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, করোনার দুই বছরে শিক্ষার

 অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামে যারা ডিজিটালি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেনি। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তাই আমরা মনে করছি এবারের বাজেটে শিক্ষার ক্ষতি পূরণের রূপরেখা দেয়া দরকার, যা এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি না। তিনি আরও বলেন, আমরা বাজেটে শুধু বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব দেখি, কিন্তু সেগুলো কতটা বাস্তবায়িত হলো সেটি বিবেচনায় নিই না। আমি মনে করি যারা বাজেট বাস্তবায়ন করে তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।

এ সময় অর্থনীতিবিদ ও এডুকেশন ওয়াচের সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, অনেক বছর ধরে শিক্ষা আইনের খসড়া ঝুলে আছে। এ আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা খাতে যেসব সমস্যা আছে, তা সমাধান করা যাবে না। যখন জাতীয় শিক্ষানীতি করা হয়, তখন শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির আড়াই শতাংশ। বলা হয়েছিল, এই বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে জিডিপির সাড়ে চার শতাংশ উন্নীত করা হবে। বর্তমানে সেটা উল্টো কমে দাঁড়িয়েছে দেড় শতাংশে। পৃথিবীর অনেক দেশ, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ ও ব্যয় আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। ভারতে বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ সে দেশের জিডিপির পৌনে চার শতাংশ, নেপালে সাড়ে চার শতাংশ, পাকিস্তানে আড়াই শতাংশ, ব্রাজিলে ছয় শতাংশ ও আফ্রিকার দেশ ঘানায় চার শতাংশ। এ সময় তিনি শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত না হওয়ারও সমালোচনা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যারোমা দত্ত। তিনি বলেন, করোনার কারণে যেসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, তাদের আবার শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।