নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি রোধে পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে এসব পরিদর্শন প্রায় বন্ধ ছিল। তবে নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নিয়েই প্রধম দিনই জানালেন, ব্যাংক পরিদর্শন হবে এবং শিগগিরই পরিদর্শনের বিষয়ে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি গ্রুপের কাছে একাধিক ব্যাংক চলে গেছে। নানা অনিয়মও হচ্ছে। বেশকিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নড়বড়ে অবস্থায় আছেÑএসব বিষয়ে তেমন পরিদর্শনও হচ্ছে না; এ বিষয়ে নতুন গভর্নরের অবস্থান কী হবেÑজানতে চাইলে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আজ আমি জয়েন করে ডেপুটি গভর্নর বিএফআইইউর প্রধান, নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ইন্সপেকশন নিয়ে শিগগিরই একটা চেঞ্জ দেখতে পাবেন।
কোন কোন বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এটাকে এখন বেশি গুরুত্ব দেব। দ্বিতীয়, কাজ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা। এজন্য আমদানি-রপ্তানি যে ব্যবধানটা আছে, তা কীভাবে কমিয়ে এনে এটা নিয়ন্ত্রণের সেটাই চেষ্টা করব। তৃতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করব। আপনারা জানেন, এটা একসময় রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। মহামারি কভিড ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে এটা এখন নিচে নেমে এসেছে। এটাকে গ্রহণযোগ্য অবস্থায় নিয়ে যাব। আমার প্রত্যাশা, ছয় মাসের আমদানির পরিশোধ করা যায় এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া।
এছাড়া ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অর্থাৎ আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তিনি জানান, আমাদের বেশিরভাগ ব্যাংক ভালো অবস্থায় আছে; দুই-একটি ছাড়া। এগুলো সংস্কার করব। খেলাপি ঋণ একটা গ্রহণযোগ্য পর্যায় নিয়ে আসা ও মূলধন ঘাটতি যে সমস্যা আছে, তাও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আনার চেষ্টা করব। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের একটা আস্থার অভাব রয়েছেÑএটা কীভাবে আবার ফিরিয়ে আনা যায় এ বিষয়ে কাজ করব। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না, প্রবৃদ্ধিও হবে না। এটা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেব। বিশেষ করে সিএসএমই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করব।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে কোনো চাপ মনে করছেন কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে নতুন গভর্নর বলেন, সরকারে থাকা অবস্থায় অনেক চাপে ছিলাম। কভিডের মধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাব না। আর কোনো সময় কী সিদ্ধান্ত নিতে হয়, এটা আমরা জানি।
দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এখন বিভিন্ন ঋণের শর্তের বিষয়ে সাবেক এ সচিব বলেন, আইএমএফের শর্তের বিষয়টি সরকার দেখবে। আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসেছি। এখন সরকারে নেই। সরকারের বিষয় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করবে, তা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।
কেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখতে চানÑএ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বুদ্ধিবৃত্তিক, পেশাদারি ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দেখতে চাই।