শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের ব্যাপারে নানা বিতর্ক থাকলেও এটি যে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। বলা বাহুল্য, আমাদের স্টিল ও রি-রোলিং কারখানাগুলোর সিংহভাগ কাঁচামালই আসে এখান থেকে। কিন্তু এতে যারা কর্মরত, তাদের জীবনকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় বর্ণনা করা যায়, ‘বড়ই নির্মম ও নিষ্ঠুর’। কর্মপরিবেশের মান নিয়েও আছে প্রশ্ন ও উদ্বেগ। অনেকের হয়তো মনে আছে, এ ব্যাপারে মামলা হয়েছিল উচ্চ আদালতে। শ্রমিকদের মানসম্মত জীবন নিশ্চিত করতে ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে তাগাদাও এসেছিল আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কাক্সিক্ষত অগ্রগতি যে এসেছে, তা বলা যাবে না। তবে যেটুকু অর্জিত হয়েছে, সেজন্য সাধুবাদ জানাতে চাই সংশ্লিষ্টদের। আমাদের প্রত্যাশা, এ ধারা তারা অব্যাহত রাখবেন; শ্রমিকদের স্বার্থ ও মানবাধিকার সুরক্ষাকে বিবেচনায় রাখবেন গুরুত্বসহ।
শিপ রিসাইক্লিংয়ের সঙ্গে পরিবেশের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। তাই দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও পরিবেশের ওপর শিল্পটি কী প্রভাব ফেলছে, তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এ শিল্প পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সেটি এখন কারও অজানা নয়। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানের বক্তাদের বরাত দিয়ে গতকালের শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে শিপ রিসাইক্লিং পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠছে ক্রমে। এটাও আমাদের জন্য বড় আশার সংবাদ। আমরা মনে করি, এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার আরও জোরদার করা দরকার। তাহলে পরিবেশের ক্ষতি নিষন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ শিল্পের অবদান বাড়াতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ হবে।
এটা ঠিক, আমাদের রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে শিপ রিসাইক্লিং শিল্প থেকে। দেশের নির্মাণ খাতের বিকাশ যেভাবে হচ্ছে, তা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় শিল্পটির পরিধি নিকট ভবিষ্যতেই বাড়বে উল্লেখযোগ্য আকারে। এ অবস্থায় শুধু আইন প্রণয়ন কিংবা নিয়মকানুন চালু করে নয়, সরকারের উচিত হবে সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত সহায়তা জোগাতে এগিয়ে আসা। একদিকে দেশকে শিগগির মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে আমাদের যেমন শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ওপর জোর দিতে হবে, তেমনি এ ধারার উন্নয়নকে টেকসই করার জন্য জোর দিতে হবে সবুজ শিল্পায়নে। সরকার যদি উপযুক্ত সহায়তা জোগায়, তাহলে শিপ রিসাইক্লিং কারখানাগুলোয় সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়বে বলে মনে হয়। প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা গেলে কারখানায় সবুজ প্রযুক্তির সূচনা করতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসবেন উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় একদিকে শ্রমিকদের মানসম্পন্ন জীবন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে তদারকি চালু থাকুক; অন্যদিকে সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে অব্যাহত রাখা হোক কার্যকর পদক্ষেপ।
Add Comment