Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:11 am

শিমুলিয়া টু ক্যালকাটা

অনাথ শিশুর মতো যার জীবনখানি নিস্তরঙ্গে নিথর হতে পারতো নিযুত জীবনের নিঠুর নিয়তিপাশে তিনি জুগিয়েছেন হৃৎস্পন্দনের খোরাক। দেশের জন্য লড়েছেন। শূন্য জমিনে গড়েছেন ব্যবসায় কাঠামো। জীবনের সব অর্জন লিখে দিয়েছেন মানুষের নামে। তিনিই দেশের সবচেয়ে সফল ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’-এর জনক রণদা প্রসাদ সাহা। নারীশিক্ষা ও চিকিৎসায় নারী-পুরুষ কিংবা ধনী-গরিবের ভেদ ভেঙেছেন। তার জীবনেই রয়েছে সসীমকে ডিঙিয়ে অসীমে শক্তি সঞ্চারের কথামালা। এ জীবন ও কেতন যেন রোমাঞ্চিত হৃদয়েরই উদ্দীপ্ত প্রেরণা। পর্ব-১৫…..

মিজানুর রহমান শেলী: ছিল না রেলগাড়ি। ছিল না ধাবমান কোনো ইঞ্জিনচালিত চক্রযান। নৌযানই ছিল ভরসা। তবু সে অজানা দিশা। শূন্য হাত। কোনো টাকা-কড়ি নেই। এভাবেই রণদার কলকাতা যাত্রা। বিশ শতকের গোড়ায় শত শত যুবা ছুটেছেন কলকাতার পথে। তাদের অনেকেই যেতেন ভাগ্যানুসন্ধানে।

তখন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে রেলগাড়ি চড়ে কলকাতা যাওয়া ছিল যেন এক নিমেষের ব্যাপার। সালটা ১৯০৭। এ সময় জগন্নাথগঞ্জে রেললাইন স্থাপন হয়েছিল বটে, সিরাজগঞ্জে তখনও না। ধারণা করা যেতে পারে তিনি কুষ্টিয়া অথবা যশোর গিয়ে ট্রেনে চেপেছিলেন। তবু তাকে নৌপথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

কলকাতা পৌঁছতে দুটি নৌপথ তখন ব্যবহার হতো: নারায়ণগঞ্জ ও জগন্নাথগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত স্টিমার যোগাযোগ ছিল। সময় লাগত প্রায় ছয় ঘণ্টা। এরপর গোয়ালন্দ থেকে কুষ্টিয়া হয়ে রেলগাড়িতে কলকাতা পৌঁছা যেত। আবার বড় বড় কার্গো নৌকা গোয়ালন্দ ও সুন্দরবন হয়ে কলকাতা পৌঁছত। এ নৌযানগুলোর মালিক ও ব্যবস্থাপনায় ছিল ‘ইন্ডিয়া জেনারেল স্টিম নেভিগেশন অ্যান্ড দ্য রিভার স্টিম  নেভিগেশন কোম্পানি’। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া কার্গো সার্ভিসের মালিকানায় ছিল ‘ইস্ট বেঙ্গল রিভার সার্র্ভিস লিমিটেড’। এটা ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠা পায়। এ কোম্পানির অর্থায়নে ছিলেন ভাগ্যকুলের রায় পরিবার। তবে নারায়ণগঞ্জ হয়ে রণদার কলকাতার যাওয়ার সম্ভাবনাকে ক্ষীণ মনে করেছেন অনেকেই। কেননা আশুলিয়া থেকে তখন নারায়ণগঞ্জ পৌঁছবার পথটি খুব বেশি মসৃণ বা সহজতর ছিল না। তাছাড়া পেছনের দিকে অতিরিক্ত পথে তিনি কেনই-বা যাবেন? ১৮৬৫ সালে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী রেলপথ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা আশুলিয়া তথা শিমুলিয়াবাসীর অনুক‚লে ছিল না। অন্যদিকে কালিয়াকৈর হয়ে একটি জলপথে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছা যেত। সে পথটিও খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি।

রণদার স্নেহভাজন প্রতিবেশী এবং কুমুদিনী হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী হƒষিকেশ সাহার মতে তিনি পোড়াবাড়ী হয়েই কলকাতা গিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ যাননি। এ মতের সঙ্গে সাহাপাড়ার আরও অনেক জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিজনের সমর্থন জোরালো। তাদের ধারণা, রণদা প্রসাদ সাহা পিতৃভ‚মির চেনা পথ ধরেই শিমুলিয়া থেকে মির্জাপুর হয়ে পোড়াবাড়ীর ঘাটে উঠেছিলেন।

ঢাকা কিংবা নারায়ণগঞ্জ না গিয়ে, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ী হয়ে কলকাতা যাওয়ার পথটি মির্জাপুরবাসীর কাছে বেশি জনপ্রিয় ছিল। এ ঘাটের ইতিহাস ১৬০৮ সাল পর্যন্ত পেছনে। এ সময় হজরত শাহ জামানকে আতিয়া পরগণার শাসক নিযুক্ত করেন মোগল সুবেদার ইসলাম খাঁ। শাহ জামানই এ পোড়াবাড়ী গ্রামটিতে নদীবন্দর গড়ে তোলেন। সে সময় ধলেশ্বরীর পশ্চিম তীরে পোড়াবাড়ী বাজারে জমে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা-বাণিজ্য। এ পোড়াবাড়ী ঘাটে সেই থেকে ভিড়তে থাকে বড় বড় সওদাগরী নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। এরই ধারাবাহিকতায় আঠারো শতকের শেষ ভাগে কিংবা উনিশ শতকের প্রথম ভাগে (রণদার কলকাতা অভিযাত্রাকালের কিছু আগে) দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি আসাম থেকে পোড়াবাড়ী আসেন। তিনি এখানে এসে যমুনার মৃদুপানি আর গরুর দুধে প্রথম চমচম বানান। সেই থেকে এখানকার চমচমের খ্যাতি দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে ৪০-৫০টি মিষ্টির দোকান হয়। প্রতিদিন ১৫০-২০০ মণ তৈরি হতো। বন্দর সুবিধার কারণে এ মিষ্টি আঞ্চলিক চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি হয়েছে।

যা হোক, সাহাপাড়ার কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদীটির উৎপত্তি হয়েছে বংশী নদী থেকে। এ বংশী নদী যমুনায় পোড়াবাড়ীর কাছে মিলিত হয়। ফলে পোড়াবাড়ী ঘাট থেকে সহজেই কলকাতাগামী স্টিমার বা সওদাগরী নৌকায় ওঠা যেত। তাছাড়া এ ঘাট থেকে কিছুদূর এগোলেই জগন্নাথগঞ্জ ঘাট। সরিষাবাড়ীর পথটিও ছিল এ অঞ্চলে তৎকালের উন্নত সড়ক যোগাযোগ। তাছাড়া এখানকার জমজমাট পরিবেশকে কেন্দ্র করে সবাই যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। সর্বোপরি রণদা প্রসাদ এ নৌপথই ব্যবহার করেছেন বলে গবেষণায় সম্ভাব্যতা প্রতীয়মান হয়। তাছাড়া রণদার কলকাতা-জীবন শুরু হয়েছিল শিয়ালদহ স্টেশন থেকে। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সহজ অনুমেয় যে, তিনি স্টিমারে কিছুদূর এগিয়ে ট্রেনে চেপেছিলেন।

পোড়াবাড়ী ঘাট পার হয়ে অমরপুর ঘাট থেকে এগিয়ে সিরাজগঞ্জের রেলপথ ব্যবহার করার প্রচলন অবশ্য বিশ শতকের শুরুতে শুরু হয়। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ এবং আসামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য পদ্মার ওপরে সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ দুই লেনবিশিষ্ট হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল চলাচল উদ্বোধন করা হয়। এর ফলে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে চিলাহাটি হয়ে কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য স্থানে মালামাল সরবরাহ ও যাত্রী চলাচল গাড়ি বদল ছাড়াই সম্ভব হয়। এই ১৯১৫-১৬ সালে সারা (হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কোলঘেঁষা)Ñসিরাজগঞ্জ রেলপথ চালু হয়। অর্থাৎ টাঙ্গাইলবাসীর অমরপুর ঘাট হয়ে সিরাজগঞ্জ পৌঁছা এবং তারপর রেলে চেপে কলকাতা যাওয়ার চল শুরু হয় ১৯১৫-১৯১৬ সালের পর। স্বভাবতই প্রতীয়মান হয়, রণদা এই রেলপথ ব্যবহার করেননি। কেননা তিনি ১৯০৭ সালে যাত্রা করেন। সেক্ষেত্রে রণদার রেলগাড়ি ব্যবহারের একটি পথই উš§ুুক্ত থাকে, সেটা হলো গোয়ালন্দ থেকে কুষ্টিয়া হয়ে কলকাতা। তবে গবেষণার অনুমিত সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণে আরেকটি সম্ভাব্যতাও গুরুত্ববাহী: রণদা যেহেতু শিমুলিয়া থেকে রওনা হয়েছিলেন, সেহেতু শিমুলিয়া থেকে সরাসরি পশ্চিমে গোয়ালন্দ পৌঁছতে পারতেন। হেঁটে বা বিল-ঝিলের ভেতর দিয়ে। ছোট নৌকা কিংবা ডোঙায় চেপে। অতিরিক্ত পথে তিনি কেন পোড়াবাড়ী যাবেন? হেঁটে গোয়ালন্দ যেতে ১০ ঘণ্টাই যথেষ্ট। আর সে সময়ে মানুষ দূরদূরান্ত পায়ে হেঁটে চলত। নৌকায় গেলে পথটি আরও সহজ। অর্থাৎ রণদা শিমুলিয়া থেকে সরাসরি গোয়ালন্দে গিয়েছিলেন, এ মতটিই প্রাধান্য পেতে পারে।

কিন্তু দূরপথের যাত্রাখরচ তিনি কীভাবে জোটালেন? কিংবা আহারই বা কোত্থেকে জুটিয়েছিলেন। এর স্পষ্ট কোনো জবাব জানা যায় না। বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে এর সহজ জবাবে জানা যায়, তিনি খেয়ে না খেয়ে বা মানুষের সহযোগিতায় কলকাতা পৌঁছেছিলেন। গবেষণায় তথ্যের এ সীমাবদ্ধতা রয়েই গেল। তবু রণদা প্রসাদ সাহার জীবন ও সময় উপলব্ধির যথেষ্ট অনুষঙ্গ বিচার করা চলে।

কার্যত বিশ শতকের প্রান্তিক মানুষের কলকাতা অভিযাত্রা এবং সেখানে গিয়ে জীবনসংগ্রামের প্রাচীর ভেঙে নতুন নতুন ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে তোলার মতো সাহসী মানুষের জীবন গবেষণায় আকিজ গ্রæপের চেয়ারম্যান সেখ আকিজ উদ্দিন খুবই প্রাসঙ্গিক। তখন পূর্ব বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে কলকাতা যাওয়া ছিল সহজতর। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কলকাতা থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেলপথ ১৮৬২ সালে প্রতিষ্ঠা পায়। এরপর ১৮৮২-৮৪ সালে যশোর-খুলনা রেলপথ প্রতিষ্ঠিত হলো। সেই থেকেই পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন গতি আসে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নব নব দুয়ার খুলতে থাকে।

সেখ আকিজ উদ্দিনের কাছে কলকাতা অচেনা হলেও, কলকাতার পথটা ছিল স্বভাবতই চেনা। বিপরীতক্রমে, রণদা প্রসাদ সাহার কলকাতা অভিযাত্রা ছিল অজানার উদ্দেশে এক দুঃসাহসিক অভিযান। এমনকি খালি চোখে দেখলে তা অনেকটা মরীচিকার মতো মনে হয়। কলকাতা ও কলকাতার পথ কোনোটাই তার কাছে চেনা ছিল না। তাছাড়া আকিজ উদ্দিনের কলকাতায় পাড়ি জমানোর আগেই কলকাতার পথে ফেরি করার অভ্যাস ছিল। সেখ আকিজ ডাবের ফেরি নিয়ে ট্রেনে কলকাতা পৌঁছতেন নিত্যদিন। এই ফেরির সুবাদে, কিছু পুঁজি জমা হয়; পথটিও চেনা হয়ে যায়। তিনি কাউকে না জানিয়ে এক সন্ধ্যা বেলা ১৭ টাকা নিয়ে কলকাতা পৌঁছেন। অথচ রণদা কলকাতা ভ্রমণের আগে কখনও অর্থ উপার্জনের অভিজ্ঞতা লাভ করেননি। হাতে কোনো টাকাও ছিল না। একেবারে শূন্য হাতেই তিনি যাত্রা করেন। উল্লেখ্য, আকিজ উদ্দিন কলকাতার পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৯৩৩ সালের দিকে, আর রণদা তার চেয়ে পূর্বতন। সালটা ১৯০৭। মানে আরও বেশি চড়াই পাড়ি দেওয়া গন্তব্য।

শূন্য-নিঃস্ব হাত। তবু তিনি যে পথ ধরেছেন না ফেরার পথ। মাঝপথে সেই পথ হারাবার জো ছিল না। তাকে তো যেতেই হবে। কষ্টের মধ্যেও রণদার অভিযাত্রিক অনুভ‚তি ছিল বটে। গ্রামের এক অনুসন্ধিৎসু কিশোর মন নিশ্চয় শহরের টানে আহ্লাদিত থাকবে সেটা স্বাভাবিক। শহুরে চকোলেট খাওয়ার নেশায় কিছুদিন আগেই মামাবাড়িতে দাদুর সঙ্গে তিনি বাজি ধরেছিলেন। আজ তিনি নিজেই শহরে যাচ্ছেন। সে সময় বাংলার প্রধান শহর কলকাতা। ভারতের রাজধানীও বটে। হুগলি নদীর তীরে এ শহরের অবস্থান। বিশ শতকের শুরুর দিকে এ রাজধানী শহরখানি ছিল উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক দিয়ে সার্কুলার রোডে ঘেরা। ব্যতিক্রম কেবল পশ্চিম দিক এ দিকটি ছিল হুগলি নদীতট। এখনও এ নদীতটের প্রসিদ্ধি আছে। দূর প্রাচীনেও ছিল। কালীঘাট থেকেই কালি কাতা নামের উদ্ভব। এখানে ছিল শ্মশানঘাট। বর্ষাকালে এ জায়গাটির অবস্থা হয়ে পড়ত অতিশয় দুর্বিষহ। শোনা যায়, বর্ষায় এখান থেকে অনেক ইউরোপিয়ান অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন।

তবুও কলকাতার জৌলুস ছিল। আলো ঝলমলে চেহারা, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রাচ্য-প্রতীচ্য সবারই নজর এই শহর আর পাশঘেঁষা নদীবন্দরের দিকে। অনানুষ্ঠানিকভাবে সে সময় কলকাতাকে ব্রিটিশ সাম্র্রাজ্যের দ্বিতীর নগরী বলা হতো। অবশ্য লন্ডনকে প্রথম ধরে আরও কিছু শহর দ্বিতীয় হওয়ার দাবি রাখত।

যা হোক, সব দিক থেকে রাজধানী কলকাতা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক গুরুত্ববহ শহর। ১৯১১ সালে কলকাতা রাজধানীর মর্যাদা হারায়। অর্থাৎ রাজধানী হিসেবে কলকাতার ঔজ্জ্বল্য যখন দেদীপ্যমান, তখনই রণদা কলকাতা পৌঁছান। কিশোর রণদা রাজধানীর বায়ু রোমন্থন করেন। সেখানে তাকে কষ্টের মাঝেই টিকে থাকার লড়াই করতে হয়েছে। লড়াইয়ে তার ক্ষান্তি ছিল না। এর মাঝেও তিনি ইংরেজি শিখেছেন। কলকাতার রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কারের মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। গড়েছেন ব্যবসায় উদ্যোগ। এভাবেই কিশোর রণার সাহাপাড়া টু ক্যালকাটা ভ্রমণটা হয়ে উঠেছিল সঞ্চারিত এক অনুভ‚তি, একটি ইতিহাস।

 

গবেষক, শেয়ার বিজ

mshelleyjuÑgmail.com