মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: শিম বাংলাদেশের অন্যতম লতাজাতীয় শীতকালীন সবজি। চুয়াডাঙ্গায় এটি গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে আবাদ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন শিম চাষে ঝুঁকছেন। জেলায় এটি মাচায় জন্মানো হয়।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৫০ হেক্টর জমিতে আগাম অটো জাতের শিম আবাদ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে সদরে ৪০০, আলমডাঙ্গায় ৫০, দামুড়হুদায় ৩০০ ও জীবনগর উপজেলায় ২০০ হেক্টর রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছিল, চলতি মৌসুমে যা ১০০ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টরপ্রতি ১২ টন।
চুয়াডাঙ্গার বাজারে আগাম শিম উঠতে শুরু করেছে। অসময়ে শিমের আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। ফলে ফলন যেমন বেশি তেমনি বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকরা বেশ খুশি।
গ্রামের মাঠের দিকে তাকালে দেখা যায়, জমিজুড়ে শিম আর মাচা। মাটি থেকে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ ফুট উঁচু বাঁশের মাচা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল অটো জাতের শিম। বিকাল হলেই কৃষকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিমের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ বিকালই শিমের পরিচর্যার উপযুক্ত সময়।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুঁকিয়া চাঁদপুর গ্রামের কৃষক খাইরুল ইসলাম (৫০) জানান, তিনি ১৩ বছর ধরে শিম আবাদ করছেন। এ বছর তিনি দেড় বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছেন।
তিনি বলেন, আবহাওয়ায় ও বাজারদর বেশ ভালো। তার দেখাদেখি অন্য কৃষকরা আগ্রহী হয়ে শিমের আবাদ করেছেন বলে তিনি জানান। প্রথমে অল্প অল্প জমিতে শিমের আবাদ করতে করতে কৃষকরা এখন ব্যাপক হারে শিম আবাদ করেছেন। প্রতি বছর শিম বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করছেন খায়রুল। তিনি আশা করছেন, বিঘাপ্রতি এক লাখ টাকার শিম বিক্রি হবে। এরই মধ্যে কয়েক মন শিম বিক্রি করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকলে দেড় বিঘা জমিতে কমপক্ষে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
একই গ্রামের শিমচাষি সাহাবুদ্দিন (৪২), গৌতম সাহা (৬০), আব্দুল আজিজ (৫৫) ও আহম্মদ আলী (৪২) একই কথা বলেন। তারা বলেন, বিঘাপ্রতি খরচ বাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়।
বর্তমানে শিম চাষাবাদে নানা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি। বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম আবাদ করতে বীজ, সার, বাঁশ, তার, শ্রমিক ও সেচ খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল ও ফল ধরার সময় পোকা দমন ও পচনরোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ স্প্রে করতে হয়। ৫০ থেকে ৫৫ দিনে গাছে শিম ধরা শুরু করে। এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত শিম বাজারজাত করতে অন্য কোথায়ও নেয়া প্রয়োজন পড়ে না। পাইকারি ক্রেতারা এসে তাদের কাছ থেকে শিম কিনে নিয়ে যান।
কুঁকিয়া চাঁদপুর গ্রামের শিম ব্যবসায়ী ফিরোজ আহম্মদ বলেন, আমাদের এলাকায় (বারী-১ বা স্থানীয় অটো জাত) শিমের অগ্রিম আবাদ হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি কৃষকদের জমি থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে পাইকারি দরে কিনে কখনও ঢাকা, চট্টগ্রামে বা ময়মনসিংহে পাঠাই। কখনও কমিশনে বিক্রয় করি।
ঠাকুরপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ ব্লকে ৬৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ হয়েছে। আমরা কৃষকদের সব সময় পাশে থেকে পরামর্শ দিচ্ছি ও নানা সমস্যার সমাধান করে থাকি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার প্রশিক্ষণ সম্পাদক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা সবজি আবাদে সব সময় অগ্রগামী। গত বছর ৮৫০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিমের আবাদ হয়েছিল আর এ বছর ৯৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে শিমের উত্তোলন শুরু হয়ে গেছে। অসময়ে শিমের দামটা বেশি পাওয়া যায়, এ জন্য কৃষকরা আগ্রহী হয়েছেন। অসময়ে শিমের আবাদ করতে গেলে কিছু পোকা-মাকড়ের সমস্যা হয়। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি- আইটেম পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন করার। শিমটা যেহেতু অসময়ে বাজারে আসে। তাই আমরা নিরাপদে যদি ফসলটি বাজারে তুলতে পারি তাহলে একদিকে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ক্রেতারা নিরাপদ সবজি পাবেন। এ কারণে আমাদের জেলায় দিন দিন শিমের আবাদ বাড়ছে।
বর্তমানে শিমের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। গড়ে ৫০ টাকা দাম ধরে এ জেলার কৃষকরা ৯৫০ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার শিম বিক্রয় করতে পারবেন।