শিল্পঋণে করুণ দশা বিতরণ বাড়লেও কমেছে আদায়

 জয়নাল আবেদিন: কভিডের ধাক্কা সামলে নতুন করে যাত্রা করেছে আর্থিক খাত। কিন্তু এখনও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। কারণ কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে শঙ্কিত বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। তথ্যমতে গত সেপ্টেম্বর শেষে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়লেও এক দশমিক ৮৯ শতাংশ কমেছে আদায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন সব ব্যবসায়ী হাতে টাকা জমা রাখতে চাচ্ছেন। কারণ, কভিডের তৃতীয় ধাক্কায় লকডাউনের মতো কোনো পরিস্থিতে তৈরি হলে ব্যবসা পরিচালনা খুবই কঠিন হবে। তাই ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধে গড়িমসি করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর শেষে শিল্পঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৮৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে (চলতি সেপ্টেম্বর) ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ছয় হাজার ৫৯৬ কোটি ৮২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

এদিকে, বিতরণের বিপরীতে শিল্পঋণ আদায়ের হার এক দশমিক ৮৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তথ্যমতে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শিল্পঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ২৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা চলতি সেপ্টেম্বরে ৮২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিতরণকৃত মোট শিল্পঋণের মধ্যে ছয় লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। তুলনামূলকভাবে এই পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় সাত দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বকেয়া ছিল পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। শিল্প খাতে বিতরণকৃত মোট ঋণের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের পরিমাণ ৮৪ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৮৫ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানান, গত বছর জুনে দেশে কভিডের সংক্রমণ ও প্রাদুর্ভাবের কারণে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ কমেছিল, তবে সরকারের বি?শেষ প্রণোদনার ঋণপ্রবাহ বাড়ায় সা?র্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণে তেমন উন্নতি হয়নি। গত অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতের মেয়াদি ঋণ বিতরণ চার শতাংশ বা ৬১৮ কোটি টাকা কমেছে। সেপ্টেম্বর ২০২০ শেষে মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ১৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণের পরিমাণ বৃহৎ শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পে যথাক্রমে ০.৬০ ও ৯.৬৯ শতাংশ বাড়লেও মাঝারি শিল্পে ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমেছে।

চলতি মূলধন ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ৭৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। তবে এক বছর পর ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়ে ৯১ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। চলতি মূলধন ঋণ বিতরণের পরিমাণ বৃহৎ শিল্প, মাঝারি শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পে যথাক্রমে ১৪.৩৪, ১৯.৬৫ ও ২৪.৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ছয় হাজার ৫৯৬ কোটি ৮২ কোটি টাকার শিল্প ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংক। এর মধ্যে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে যথাক্রমে ১২.২৬, ৬.৭৮ ও ২১.২৮ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে শিল্পের আকার অনুযায়ী বৃহৎ, মাঝারি ও

ক্ষুদ্র শিল্পের হার যথাক্রমে ৮১.৮৬, ৯.৮২ এবং ৮.৩১ শতাংশ।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, মহামারি পরিস্থিতি কিছু উন্নতি হওয়ায় শিল্পঋণের চাহিদা বেড়েছে। তবে এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি। কভিডের তৃতীয় ধাক্কা আসতে পারে। আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনও ভ্যাকসিনের আওতায়ও আসেনি। তবে ভবিষ্যতে কী অবস্থা হবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০