Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 11:29 pm

শিল্পকারখানায় দুর্ঘটনা

দিন দিন দেশে যেন দুর্ঘটনা ঘটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কোনোভাবেই এ দুর্ঘটনা ঘটার পরিমাণ কমছে না, উপরন্তু দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে তার আপন গতিতে। বিগত এক দশকের ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অগণিত মানুষ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন হাজার, হাজার মানুষ। দুর্ঘটনায় কেবল প্রাণহানি হয় না সঙ্গে বিনষ্ট হয় হাজার, হাজার পরিবারের স্বপ্নের ভ্রুণ। উন্নয়নশীল এ দেশের হাজারো পরিবার আছেন, যাদের পরিবারের একজনের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে পুরো পরিবার পরিচালিত হয়। দুর্ঘটনার স্বীকার পরিবারগুলো হয়ে পড়ে সর্বস্বান্ত। এদিকে প্রতি দুর্ঘটনার পরেই মৃত ব্যক্তি ও আহত ব্যক্তির পরিবারের জন্য যেই আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা খুব নগণ্য। কিন্তু এসব দুর্ঘটনায যেসব জীবন ঝরে যায়, তাদের জীবনের আসলে মূল্য কত অথবা সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে যারা বেঁচে থাকেন, তাদের এই ভোগান্তির আর্থিক মূল্যই বা কত বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে দুর্ঘটনার স্বীকার কিংবা আহত পরিবারের জন্য বর্তমান প্রচলিত আর্থিক সহযোগিতা  কতটা যথোপযুক্ত না কেবল দায়সারা সাহায্য  ক্ষেত্রবিশেষে মিডিয়ায় প্রচারণার ফলে কিংবা ইন্টারনেটে ভাইরালের সুবাধে কোনো কোনো পরিবার কিছুটা যথোপযুক্ত সহযোগিতা পেয়ে থাকলেও সেটা সব ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে প্রাপ্তি ঘটে না। তাই দুর্ঘটনার স্বীকার এসব ভুক্তভোগী পরিবারের পরিবার পরিচালনার জন্য স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে স্থায়ী আর্থিক সচ্ছলতা তৈরি করে দেয়ার ব্যাপারে কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি যথোপযুক্ত কার্যকরী এই দায়িত্ব পালনে সরকারের বিশেষ আর্থিক তহবিল গঠন করতে হবে।

এদিকে বিগত এক দশকের দুর্ঘটনাগুলো পর্যালোচনায়  দেখা যায় দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও শিল্প কারখানা, কেমিক্যাল গোডাউনের অগ্নিকাণ্ড জনিত দুর্ঘটনা বেশি হয়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সডক দুর্ঘটনায় মারা যায়। সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আরেক জরিপে উঠে এসেছে দিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন দেশে। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষের উদাসীনতা লক্ষণীয়। যেমন- লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন বাস, অনুমোদনবিহীন বিভিন্ন যানবাহন রাস্তায় চলাচলসহ ট্রাফিক আইন অমান্য করে যাত্রীদের রাস্তা পারাপার হওয়ার ঘটনাগুলো রয়েছে।

সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন ৪৩ জন, নিহতদের মধ্যে সাতজন ছিলেন দমকল বিভাগের কর্মী ও আহত তিন শতাধিক। এদিকে দেশে যে কোনো কেমিক্যাল আমদানিতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও সবাই অনুমোদন নেয় না! চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোটির হ্যান্ডলিংয়ের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিলেও প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ পণ্যের কনটেইনার ছাড়াও কেমিক্যাল বা সমজাতীয় বস্তু বা পদার্থ মজুদ করত, সেদিন ডিপোতে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল, যার অনুমোদন ছিল না। এখানেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকলেও কিছুদিন পর দায়সারা তদন্ত রিপোর্ট ছাড়া আর কিছুই হবে না। প্রতি দুর্ঘটনার পর অব্যবস্থাপনা রুখতে কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগের কথা শোনালেও  বাস্তবে এসবের কোনো ব্যবস্থা হয় না। ফলে কয়েক বছর পরপর অগ্নিকাণ্ডসহ নানা ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে ক্রমাগতভাবে।

আর ক্রমবর্ধমান লাগামহীন দুর্ঘটনা হ্রাসে কঠোর  প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি  দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ পেলে আইনের আওতায় এনে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষদেরও দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এভাবেই আমাদের দুর্ঘটনার লাগামহীন ঘোড়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করে দেশের নাগরিকদের নিরাপদ জীবনযাপনের সুযোগ করে দিতে হবে।

অপু দেবনাথ

শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ

খিলগাঁও মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজ