বহুল কাক্সিক্ষত অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে না হতেই ‘দাবি পূরণে’ সক্রিয় হয়েছে সুযোগসন্ধানীরা। একেকবার একেক পক্ষকে উসকে দেয়া হচ্ছে। কখনও আনসার, কখনও পল্লী বিদ্যুৎ, আবার কখনও পোশাকশিল্প। মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বৈঠক করেছেন। সেখানে শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে শতাধিক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ব্যবসায়ী নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজর আনেন। শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে শিল্পের নিরাপত্তায় শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। এরপর যৌথ অভিযানের নির্দেশনা আসে। আবার শুরু হয়েছে ওষুধশিল্পে অস্থিরতা। বর্তমানে দেশে ১৯টির বেশি ওষুধ কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে। এর জেরে কার্যত বন্ধ রয়েছে ওষুধ উৎপাদন কার্যক্রম। এ অবস্থাকে জাতীয় সংকট উল্লেখ করে ওষুধশিল্প মালিকরাও সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চেয়েছেন।
এত দিন ব্যবসায়ীরা ক্ষমতাসীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে এসেছেন। বিনিময়ও কম পাননি। ছাড়, প্রণোদনা, ঋণÑসবই পেয়েছেন তারা। শুধু তা-ই নয়, এত বেশি নিয়েছেন; একপ্রকার লুটেপুটে নিয়েছেন। বিদেশে অনেকে অর্থপাচার করেছেন। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিল্পকারখানাগুলোয় কেন একধরনের অস্থিরতা চলছে সাধারণ মানুষ জানেন। ব্যবসায়ীরা এখন বলছেন, ‘সবাই একটা পরিবর্তন চান। কিন্তু বর্তমানে যা চলছে, সেটি কারোই কাম্য নয়।’ কিন্তু তারা কি আদৌ পরিবর্তন চেয়েছেন। যে সরকার জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে, ‘বারবার সেই সরকারই দরকার’ বলে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারা। এখন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বেকায়দায় আছেন তারা। ব্যবসায়ীরা শ্রমিক-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন বলেই আমরা আশা করি। অবশ্য কারখানার ফটকে বহিরাগত শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন; কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছেন। এটি দুঃখজনক। সরকারের উচিত শূন্য সহনশীলতায় অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। যথানিয়মে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হলে স্বার্থান্ধ দুষ্কৃতকারীদের শায়েস্তা করা কঠিন হবে না।
অস্থিরতায় ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু করা হলে দেশপ্রেমিক জনতা সর্বাত্মক সহায়তা করবে। আমাদের পোশাক ও ওষুধশিল্প স্বনির্ভর, ক্রমবর্ধমান ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিল্প। এসব শিল্প ধ্বংস করার কোনো চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিনে নাগরিকদের লৌহকঠিন দৃঢ়তায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।