প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দুটি বিদেশি বৃহৎ স্টক এক্সচেঞ্জ আসা সত্ত্বেও কেন বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। আসলে কৌশলগত অংশীদারের ইতিবাচক প্রভাব একটি নির্দিষ্ট সময় পাওয়া যাবে। রাতারাতি এর সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ যে কোনো কাজের সুফল পেতে হলে একটু সময় লাগে। চীন ইকুইটি মার্কেটের পাশাপাশি অন্যান্য অনেক পণ্য নিয়ে কাজ করে। তারা প্রযুক্তিগত দিক থেকেও অনেক উন্নত। তাছাড়া শিল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংকমুখী না হয়ে পুঁজিবাজারকেও কাজে লাগাতে হবে। আর পুঁজিবাজার থেকে যদি বিভিন্ন বড় করপোরেট হাউজগুলো অর্থ সংগ্রহ করত তাহলে কিন্তু ব্যাংক কেলেঙ্কারি অনেকাংশে কমে যেত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন কেএইচবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি রাজিব সোম এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ড. জহিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
রাজিব সোম বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ একটি উদীয়মান বাজার হলেও আন্তর্জাতিক বাজারগুলোর থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। এটির সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের পণ্যর কমতি সঙ্গে রয়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব। তারপরও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো একটি জায়গায় শেনঝেন, সাংহাই ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া এ তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জ কৌশলগত অংশীদার হওয়ার জন্য যে আগ্রহ দেখিয়েছে তা আমাদের জন্য অনেক বড় বিষয় বলে মনে করি। তুলনামূলকভাবে অধিক লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা থেকে সম্প্রতি চীনের শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বাছাই করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এছাড়াও শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ পৃথিবীর সেরা ১০টি স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে দুটি। ফলে তারা যদি দেশের পুঁজিবাজারে আসে তাহলে অবশ্যই বাজার দীর্ঘ সময়ের জন্য ভালো হবে। তাদের থেকে আমাদের প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলো ভালোভাবে নিতে হবে কারণ এক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি আছে। তাছাড়া দেশের পুঁজিবাজার এখনও ইকুইটি নির্ভরশীল একটি বাজার। তাদের সম্পৃক্ততায় আশা করি বাজারে বন্ড ও অন্যান্য পণ্যগুলো দ্রুতই আসবে। তবে তারা প্রযুক্তিগত সুবিধা দিতে চাইলেও তা আমাদের গ্রহণ করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সবদিক বিবেচনায় কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীন পুঁজিবাজারের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে আশা করি।
জহিরুল ইসলাম বলেন, অনেকেই বলেন কৌশলগত অংশীদার হিসেবে এত বড় দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ পুঁজিবাজারে এলো কিন্তু তারপরও বাজারে তার ইতিবাচক কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমি মনে করি কৌশলগত অংশীদারের ইতিবাচক প্রভাব একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যাবে। রাতারাতি এর সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ যে কোনো কাজের সুফল পেতে হলে একটু সময় লাগে। এছাড়া পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চীন ইকুইটি মার্কেটের পাশাপাশি অন্যান্য অনেক পণ্য নিয়ে কাজ করে। তারা ডেরিভেটিভস নিয়ে কাজ করে সঙ্গে বন্ড মার্কেটও অনেক শক্তিশালী তাদের। কাজেই এ বিষয়গুলো যখন দেশের পুঁজিবাজারে আসবে তখন বাজারের চেহারাটাই বদলে যাবে। তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হলেও তা স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে লেনদেন ৪০০-৫০০ কোটি টাকার মধ্যেই বেশ কিছুদিন যাবৎ ঘুরপাক খাচ্ছে। তাছাড়া শিল্প স্থাপনে অর্থায়নের ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংকমুখী না হয়ে পুঁজিবাজারকেও কাজে লাগাতে হবে। আর পুঁজিবাজার থেকে যদি বিভিন্ন বড় করপোরেট হাউজগুলো অর্থ সংগ্রহ করত তাহলে কিন্তু ব্যাংক কেলেঙ্কারি অনেকাংশে কমে যেত। আর ব্যাংক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে কঠোর ও সঠিক শাসন ব্যবস্থাই এর সমাধান।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম